Freedom of Expression and Speech ,
ভারতের সংবিধানের ১৯ নং ধারায় একটি খুব গুরুত্বপুর্ণ মৌলিক অধিকার । যে
অধিকারগুলো আমাদের শ্বাস নেওয়াকে সত্যিকার ‘বাঁচা’য় পরিনত করে । কিন্তু
বর্তমান সময়ে বারবার যে জিনিসটা প্রকাশ্যে বলাৎকার হয়েছে তা হল এই অন্যতম মৌলিক
অধিকারটি , যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মেরুদন্ড গঠন করে ।
কথা বলার অধিকার, লেখার অধিকার, বই পড়ার অধিকার, স্বাধীন চিন্তাভাবনার অধিকার,
প্রথাগত ধারনার বাইরে যাওয়ার অধিকার, মস্তিষ্ক কে সবরকম গোঁড়ামী আর সংকীর্ণতা থেকে
মুক্ত রাখার অধিকার --- এগুলো ভাত খাওয়া, ঘুমানো, বাজার যাওয়ার মতই একজন স্বাধীন
মানুষের খুব জরুরী দাবীগুলোর মধ্যে অন্যতম । এর জন্য মোটা মোটা বই পড়ার দরকার পড়ে
না , একটু সংবেদনশীল মন থাকলেই সেটা অনুভব করা যায় ।
অথচ এদেশে এই ১৯ নং ধারায় বলা মানবাধিকারটিকে খুব
নির্মমভাবে হত্যা করার জন্য সেই একই সংবিধানে ১৯(২)ধারা তৈরী করা হয়েছে। কি আছে এই
ধারায়?
“Under Indian Law, the Freedom of speech and of the press do not confer an
absolute right to express one’s thoughts freely. Article 19 (2) of the Indian
Constitution enables the legislature to impose certain restrictions on free
speech under following heads:
1. Security of the state.
2. Friendly relation with the foreign states.
3. Public order.
4. Decency and morality.
5. Contempt of the court.
6. Defamation.
7. Incitement to an offence .
And
8. Sovereignty and integrity of India.
Reasonable restrictions on these grounds can be imposed only by a duly
enacted law and not by executive action.”
এখন ব্যাপার হল, এই ৮ টি নিষিদ্ধ জায়গায় কোথাও নির্দিষ্ট
করে কিছু বলা নেই । Decency and Morality বা defamation বলতে তুমি ঠিক কি বুঝবে ? কোনো শিশুপাঠ্য নীতিশিক্ষার অপমান
নাকি আমার তোমার মত সাধারন পাব্লিককে কেউ গালি দিলো সেটা ? নাকি আমার তোমার
জাত-ধর্ম নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে সেটা ? এখানেই থেকে যায় আসল ফাঁক ,কথ্যভাষায়
ঘাপলা! আর সেই ঘাপলার সুযোগ নিয়ে যে কেউ যে কারুর বাড়িতে হামলা করতে পারে, পুলিশ
ডাকতে পারে অথবা দিনে দুপুরে যে কাউকে চাপাতি দিয়ে প্রকাশ্যে কোপাতে পারে । হ্যাঁ,
এই সব আক্রমন কিন্তু সব সংবিধানের ঘেরাটোপের আওতাভূক্ত হয়ে পড়ে । ঠিক যেমনটি হচ্ছে
মুক্তচিন্তার সাধারন মানুষ, লেখক, সাংবাদিক, সমাজসেবক বা মধ্যবিত্ত শ্রেনীর
ক্ষেত্রে ।
ভারতে যেমন ১৯(২)ধারাটি Freedom of Expression এর অধিকারটিকে সপাটে চড় কষিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের আইনে ৫৭ ধারাটিও একই দোষে
দুষ্ট । আইন ও তার প্রায়োগিক কর্মশালার তথাকথিত রক্ষকগন মুক্তবুদ্ধির ও
মুক্তচিন্তার প্রচারকদের কন্ঠরোধ করার জন্য সদা তৎপর । কারন, সমাজে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ধর্মের আফিং ও তার ধ্বজাধারীদের প্রশ্রয়
দেওয়াটা অধিক জরুরি যেটা এইসব মুক্তচিন্তার মানুষেরা যুক্তি দিয়ে প্রমান দিয়ে
সমূলে উৎখাত করে ।
আচ্ছা, নাস্তিক হওয়াটা বা সমকামী হওয়াটা ঠিক কতখানি ক্ষতি করে সমাজের? এরা আমার তোমার বাড়িতে অযাচিত ভাবে এসে উৎপাত করে না,
আচ্ছা, নাস্তিক হওয়াটা বা সমকামী হওয়াটা ঠিক কতখানি ক্ষতি করে সমাজের? এরা আমার তোমার বাড়িতে অযাচিত ভাবে এসে উৎপাত করে না,
কারুর মা-বোন-স্ত্রী-কন্যাকে ‘রেপ’ করার হুমকি দেয় না,
ড্রাগ মাফিয়ার সাথে ডীল করে না, কারুর পুকুর চুরি করে না, দেশে দেশে যুদ্ধ লাগায়
না । তাহলে? তাহলে যেটা ব্যাপার সেটা হল, এরা প্রথা বা সমাজের বহুপ্রচলিত নিয়ম
গুলোকে মানে না, যেটা আমরা করতে ভয় পাই এরা সেটাকেই করে দেখায় খুব সাহস নিয়ে ,
সবার সামনে । এইখানেই আমাদের চোখ টাটায় । তাই আমরা খুব যত্ন নিয়ে ‘নাস্তিক হটাও
অভিযানে’ নামি , সমকামীদের অশ্লীল ইঙ্গিত দিয়ে একটা স্যাডিস্টিক প্লেজার পাই । যেন
তারা ভিন গ্রহে থাকা জীব, আমাদের মত ‘মানুষ’ না ।
এই না-মানুষগুলোর জন্য তাই সংবিধান বলে কিছু থাকতে পারে না,
আইন বলেও কিছু না আর প্রশাসনিক সাহায্য বলেও কিছু না , কিচ্ছু না । এটা আমদের
তীব্র সুখ দেয় ।শালা দিলাম তোকে একঘরে করে, এবার দেখ কেমন লাগে !
‘ধর্ম’ একের পর এক যুদ্ধ, সংঘর্ষ, দাংগা পৃথিবীতে লাগিয়েছে
, এখনো লাগাচ্ছে । কখোনো ‘ক্রুসেড’ নামে, কখনো ‘জেহাদ’ নামে আবার কখনো দেশভাগ নামে
। পৃথিবীর মানচিত্রে একটা গোটা দেশ কেমন তিনটুকরো হয়ে গেল এই একটামাত্র কারনে ।
তবু ধর্ম-কে কাঠগড়ায় তোলা যাবে না। সংবিধান পারমিট করে না। আর তাই যারা একে নিয়ে
সমালোচনা করবে তাদের আমরা বাঁচতে পারমিট করব না । কারন সংবিধান আমাদের ‘ধর্মীয়
স্বাধীনতা’ দিয়েছে কিন্তু ‘ধর্ম না-মানার স্বাধীনতা’ দেয় নি । এখন তুমি কোন বড়লাট
এলে হে, ধম্ম মানো না ! অতএব ধর্মগুরুদের হাতে যেমন ধর্ম গ্রন্থ আছে, তেমনি
‘শিক্ষিত’ জনগনের জন্য নির্মিত গনতন্ত্রের হাতে দেশ চালানোর আধার মোক্ষম ওই বইটা
আছে যা অ-ধার্মিকদের কোপানোকে ‘মোরালিটি রক্ষা’র বা ‘ডিফেমেশন থেকে ধর্মকে
বাঁচানোর’ অধিকার দিয়েছে । অতএব যারা নাস্তিক কোপাবে তাদের বিরূদ্ধে অ্যাকশন নেবে
কোন পুলিশ ?
তাই বাঁধা গতের বাইরে যারাই চিন্তা করবে, বলবে, লিখবে, সভা
করবে তারা যদি অতি বড় পন্ডিতও হয় তবু আমরা তাকে কোতল করার লাইসেন্স রাখি ।সারা
পৃথিবীজুড়ে উদাহরণ ভূরি ভূরি । তাদের মধ্যে বেশকিছু চেনা জানাদের নাম।
লেখক-শিল্পীদের মধ্যে যেমন- সলমান রুশদি, তসলিমা নাসরিন, মকবুল ফিদা হুসেন, নরেন্দ্র দাভোলকার , হুমায়ুন আজাদ, ব্লগারদের মধ্যে রাজীব হায়দার, আসিফ মহিউদ্দিন, অভিজিৎ রায় , সচেতন শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে যাদবপুরের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র, বা সামান্য
প্রতিবাদি কৃষক শিলাদিত্য চৌধুরি । আরো অনেকে আছে । এদের অপরাধ একটাই । এরা খুব
যুক্তিবাদি প্রশ্ন তোলে সব রকমের বাঁধা গতের প্রতি, আংগুল তোলে প্রচলিত
ধ্যানধারনার যৌক্তিকতার দিকে, যা কখনো মৌলবাদীদের আবার কখনো সরকার বাহাদুরের কাছে
একদম ভালো লাগে না , চোখে বালির মত কড়কড় করে । তাই শানাও চাকু, চালাও গুলি, কর
দেশছাড়া, দাও নির্বাসন, ফেলে দাও জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে ।
অম্বিকেশ
মহাপাত্র সামান্য কার্টুন এঁকে শাসক গোষ্ঠির কুনজরে পড়েছিলেন ও তার ফলে জেলের
কুঠুরিতে ঠাঁই পান । শিলাদিত্য চৌধুরি প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে নির্ভিক কিছু
প্রশ্ন করেছিলেন ‘সারের দাম বাড়ছে কেন ?’ইত্যাদি । তাই তাকে দাগানো হল ‘মাওবাদী’
হিসেবে, যে ট্যাগটা আমূল বদলে দিল তার জীবন, সমাজের কাছে, দেশের কাছে, সভ্যতার
কাছে ।বড় আইরণিটা হল, সে অনেক পরে জেনেছিল এই শব্দটার মানে !
হুসেন, রুশদি, তসলিমা দেশত্যাগী হয়ে বেঁচেছেন । ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনও তাই। আজ ৮ বছর হল পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওরা তসলিমাকে তাড়িয়েছে, তাঁর স্বদেশ থেকে
তো আজ ২২ বছর হল ‘ব্যান’ তিনি, পৃথিবীর নানাদেশে নিয়েছেন আশ্রয়। কিন্তু সবাই পারেনি এভাবে বাঁচতে ।
বিখ্যাত বই ‘নারী’-র রচয়িতা হুমায়ুন আজাদ, বা ব্লগার রাজীব হায়দার পালাতে পারে নি । প্রথমজনকে ২০০৪ ঢাকার বইমেলায় কুপিয়ে
মারার চেষ্টা হয় আর পরেরজনকে দু বছর আগে ২০১৩ সালে নিজের বাড়ির সামনে কুপিয়ে
খুন করে জামাতী ইসলামীরা । নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দিন
মুক্তচিন্তার আধারে ধর্ম ও সবকরমের ধর্মিয় গোঁড়ামির জন্য ব্লগ লিখতেন বলে তাঁর উপর
হামলা চালায় মৌলবাদি গোষ্ঠি । তারপর দীর্ঘদিন হাস্পাতালে কাটানোর পরে বাংলাদেশ
পুলিশ এসে তাঁকেই গ্রেফতার করে ও আটদিনের জন্য রিমান্ডে পাঠায় । আরেক জন নাস্তিক ও বিজ্ঞনমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকতেন । ফতোয়া-হুমকি
ছিলই অনেকদিন ধরে । তাকে ধরাছোঁয়া এতদিন সম্ভব হচ্ছিল না । এবছর মৌলবাদীদের কাছে সুযোগ এসে গেল যখন
তিনি দেশে এলেন নিজেরই লেখা দুটি বই প্রকাশ করতে। ২৬ শে ফেব্রুয়ারি’১৫ ঢাকা বইমেলা চত্বরের বাইরে পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে
কুপিয়ে রাত সাড়ে ন’টার সময়ে তাকে খুন করল ইসলামভক্তরা । অভিজিৎ রায় একজন স্বনামধন্য লেখক ছিলেন। জটিল
একাডেমিক বিষয় গুলোকে সহজ সরল করে বাঙ্গালী পাঠকদের জন্যে লেখা ছিলো অভিজিৎ এর
প্রধান লক্ষ্য। প্রকাশিত এবং ম্যানুস্ক্রিপ্ট মিলিয়ে, অভিজিতের মোট দশ
এগারোটি বই আছে । তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে লিখতেন বলে জনপ্রিয় ছিলেন না, তিনি বিজ্ঞান নিয়ে
লিখতেন বলেই জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি আমাদের ভাষায় বিজ্ঞান নিয়ে লেখাকে স্কুলের গন্ডীর
বাইরে জনপ্রিয় করেছেন। তিনি গত বারো চোদ্দ বছর ধরে লিখে গেছেন
ধর্মীয় আচার বিচারের বিরুদ্ধে, ধর্মীয়
আইকনিজমের বিরুদ্ধে, ধর্মীয়
ফ্যানাসিজমের বিরুদ্ধে। আর লিখে গেছেন ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা,
তথাকথিত সংস্কারকে মান্যতা দিয়ে লালন করে চলা বিভিন্ন
সামাজিক অন্ধকারের বিরুদ্ধে। তিনি সমকামিতা নিয়েও লিখেছেন। যে সমকামিতাকে আমরা, ভারতীয়রা,
ভারতের সংবিধান এবং ভারতের সমাজ অপরাধের চোখে দেখি । অভিজিতের দোষ, সে নাস্তিক। সমস্তরকম
ধর্ম ও তার নিয়মনীতি গুলো মানত না বরং তার সমালোচনা করত। ব্লগার আসিফ ও রাজীবেরও সেই দোষ ছিল। তসলিমারও তাই । বাংলাদেশে ‘নাস্তিক’ শব্দটি একটি সাংঘাতিক খারাপ গালি । যে
নাস্তিক সে বাঁচার অধিকার হারায়। একটাই রাস্তা হয় দেশ ছেড়ে পালাও , নয় তো চুপ করে
আত্মসমর্পন কর । ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’-এর লেখক ও মুক্তমনা
ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় কোন অধিকারে বেঁচে থাকবেন, নিশ্বাস নেবেন সেদেশে
! আমাদের দেশেও একই অবস্থা। কালোজাদু ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালানোয় খুন হতে হয় নরেন্দ্র
দাভোলকরকে, শিল্পের খাতিরে ছবি আঁকার জন্য দেশছাড়া হতে হয় মকবুল ফিদা হুসেনকে, ইসলামবিরোধী কথা
বইতে লেখার জন্য কলকাতায় থাকার অধিকার হারান তসলিমা নাসরিন । আর এদিকে একজন খুনী গণহত্যাকারী হঠাৎ করে
চমকে ধমকে প্যারাসাইট-ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়ে যায় । ধর্মীয়
স্বাতন্ত্র্যরক্ষার অধিকারে বিল পাস করায় । কিন্তু নাস্তিকদের জন্য
কোনও অধিকারই থাকে না ।
ধর্ম, ধর্মবিশ্বাস আসলে খুব ঠুনকো জিনিস। সামান্য ঠাট্টা-সমালোচনাতেই
ভয়ে কেঁপে ওঠে ধর্মের ভিত । কোনো অর্বাচীন প্রশ্ন করলেই ‘ধর্মানুভূতি আহত’ হয় ।
তখন কলমের বিরুদ্ধে ঝলসে ওঠে ধর্মের তরবারি।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত সবখানেই
কমবেশি একই অবস্থা ।
গুজরাতে দেখিনি আমরা ?মুজফফরনগর দেখি নি ? বাড়ির পাশে
ত্রিলোকপুরি দেখছি না?
আমার ধর্ম অমুক, তুই ব্যাটা বিধর্মী । আমি সবচেয়ে
বেশি ভগবানের পেয়ারের বান্দা ।
হয় ‘ঘর বাপসি’ কর, নয় তো জ্বলেপুড়ে মর । এই তো ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার নয়া ট্রেন্ড ।
খুব জানতে ইচ্ছে করে, এতে কি রাষ্ট্র তার মিথ্যাচারি আইন ও ধর্মান্ধতার
পরাকাষ্ঠাকে অভয় দিতে পারে? নাকি আরো কিছু
সাদামাটা যুবককে এইসব অন্ধত্ব, ভীরুতা, অন্যায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা যোগায় !
মানববাদ বা Humanism খুব বড় একটা জিনিস , যা অভিজিৎ রায়ের মত মানুষের মনকে
আমাদের মত ক্ষুদ্র বানায় না ,বরং সোচ্চারে বলতে শেখায়, “আমি নাস্তিক। কিন্তু আমার আশে পাশের বহু কাছের
মানুষজন বন্ধু বান্ধবই মুসলিম। তাদের উপর আমার কোন রাগ নেই, নেই কোন ঘৃণা।
তাদের আনন্দের দিনে আমিও আনন্দিত হই। তাদের উপর
নিপীড়ন হলে আমিও বেদনার্ত হই। প্যালেস্টাইনে বা কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর
অত্যাচার হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য বোধ করি না। অতীতেও দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো। এটাই আমার মানবতার শিক্ষা।“
তাই তো তাঁর খুন হওয়া নিয়ে প্রতিবাদ ঝলসে
ওঠে শ্রীজাত-র কবিতার ছত্রে," যে এখনও ভেবে দেখছ পথে নামবে কিনা / আমি তার মনুষ্যত্ব স্বীকার
করিনা ।“
লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁর কলামে সোচ্চারে বলেন, “কিছু কিছু মানুষ
আছেন, যাঁরা অন্যকে বাঁচানোর জন্য পৃথিবীতে বেঁচে থাকেন । নিজেকে বাঁচানোর জন্য নয়
। অভিজিৎ রায় ছিলেন সেরকম দুর্লভ একজন মানুষ ।“
যে বাংলাদেশে
শাহবাগের মত শুভচেতনার মঞ্চ তৈরী হয়েছে, নতুন তরুণরা প্রান দিয়েও
নিজেদের দাবী, চিন্তাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পেরেছে, পেরেছে জামাতের মত অন্ধ দলকে কোণঠাসা করতে, সেই দেশে মুক্ত চিন্তার মানুষদেরই কেন বারবার অগ্নি পরীক্ষা দিতে হবে ? একটি
গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র কি এটা কাম্য ?
প্রতিটি স্বাধীন দেশ কিছু আইন বানাবে, যার যূপকাষ্ঠে শুধু বলি হবে মুক্তচিন্তার নব নব সংযোজন। এরই নাম কি ‘গনতান্ত্রিক স্বৈরাচার’ ? যেখানে গদিতে আছেন জনগনের দ্বারা
নির্বাচিত প্রশাসক আর অঙ্গুলি হেলাচ্ছে তাঁদের তাঁবেদার মৌলবাদীরা !
"A pen is mightier than sword."
“সব অস্ত্রের চেয়ে বড় হল কলম ।“
“সব অস্ত্রের চেয়ে বড় হল কলম ।“
আজ যে পৃথিবীতে আমরা
শ্বাস নিচ্ছি তাতে এই প্রবাদ কি প্রিটিংমিস্টেক নয় ?
হ্যাঁ এটাকে শ্বাস নেওয়াই বলে । বেঁচে থাকা বলে না ।
হ্যাঁ এটাকে শ্বাস নেওয়াই বলে । বেঁচে থাকা বলে না ।
বাংলাদেশ এখন বাংলাস্তান
হয়ে গেছে ।
মস্তিষ্কের স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে কি লাভ ২১ শে ফেব্রুয়ারির শোক সভার, শুভেচ্ছার , উৎসবের?
কি দরকার অমন মেলার যেখানে বই-য়ের জন্মই হয় ‘ব্যান’ হওয়ার জন্য ।
মস্তিষ্কের স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে কি লাভ ২১ শে ফেব্রুয়ারির শোক সভার, শুভেচ্ছার , উৎসবের?
কি দরকার অমন মেলার যেখানে বই-য়ের জন্মই হয় ‘ব্যান’ হওয়ার জন্য ।
বুক ফুলিয়ে বইমেলায় ঘুরে
বেরায় জংগিরা আর তাদের নজরদারিতে বিক্রি হয় লেখক-প্রকাশকদের আত্মসম্মান,
জাত্যাভিমান, সততা ।
কিসের স্বাধীন দেশ তোমাদের যা মুক্তচিন্তকদের রক্ত ছাড়া একদিন পার করে না?
কিসের এত আবেগ, কিসেরই বা জাত্যাভিমান তোমাদের, যে জাতি আজ বিশ্ব দরবারে ধর্ষিত জাতি রূপে স্বীকৃত ?
আইএস এর সিরিয়া , তালিবানী আফগানিদের দিকে যখন তর্জনী তোলো, নিজের দিকে তোমারই চারটি আঙ্গুল ইশারা করে, মনে থাকে তোমাদের ?
কিসের স্বাধীন দেশ তোমাদের যা মুক্তচিন্তকদের রক্ত ছাড়া একদিন পার করে না?
কিসের এত আবেগ, কিসেরই বা জাত্যাভিমান তোমাদের, যে জাতি আজ বিশ্ব দরবারে ধর্ষিত জাতি রূপে স্বীকৃত ?
আইএস এর সিরিয়া , তালিবানী আফগানিদের দিকে যখন তর্জনী তোলো, নিজের দিকে তোমারই চারটি আঙ্গুল ইশারা করে, মনে থাকে তোমাদের ?
হে মুজিব জাত স্বাধীন
বাংলা , এই কি তোমার গনতন্ত্র, সাম্যবাদ ? যেখানে মানুষ নিঃশ্বাস
নিতে ভয় পায়? নিজের দেশের মাটিতে
হাঁটতে ভয় পায় ?
'বাংলা' নাকি সংস্কৃতির আরেক নাম?
বাংলায় নাকি
ভুরি ভুরি গদ্য-পদ্য-সাহিত্য আর আঁতেল জন্মায় মিনিটে মিনিটে ! ২১ শে
ফেব্রুয়ারি নাকি এই এক ভাষার জন্যই রক্ত ঝরেছিল ভাষাশহীদদের ?
পৃথিবীতে আর
কোনো ভাষার জন্য এমন মারকুটে আবেগ তো শুনিনি, দেখিনি, পড়িনি , জানি নি । সেই কোন ছোট থেকে 'অমর _____' শুন্যস্থানে কেবল '২১ শে'ই বসবে জানতাম ।
আজো দেখি
বাংলাদেশ বা পশ্চিমবংগ থেকে লোক এসেছে শুনলে দেহাতি গুজরাতিও বলে, "টেগোর কি দেশকা
মেহমান হ্যায় ।“ কাউকে চিনুক না চিনুক ভিনরাজ্যের মানুষ সর্বাগ্রে বাংলার
সংস্কৃতি নিয়ে বুলি কপচায় । বাঙালি পানওয়ালাও তখন এক্কেবারে পোড়খাওয়া আঁতেলের মত
কিছুই না বুঝে নিজেকে বেশ একখান কেউকেটা বলে বুকের ছাতি ফোলায় । এরমই বাংলার পরিচয়
ছিল এককালে । এখন এসব অতীত!
সেই টেগোর, নজরুল, রোকেয়া, জীবনানন্দ আরো
কত শত নামি দামি কবি সাহিত্যিকের এই ধরাধামে বিশ্বখ্যাত বইমেলা হয় । হ্যাঁ দু'পাড়েই । সারা
ফেব্রুয়ারি জুড়ে বইয়ের হাট, মেলা, বাঙালির ১৪ তম
পার্বন।
পৃথিবীর কম সে
কম ১৪৫ রকমের আঞ্চলিক ভাষার আর কোনও বইমেলার এমন জয়ডঙ্কা বাজাতে কাউকে দেখেছে কিনা
কস্মিনকালেও কোনো ধুরন্ধর বইব্যাবসায়ীও মনে করতে পারবেন না ।
এবারে
বাংলাদেশের সেই একুশে বইমেলায় ‘রোদেলা প্রকাশনী’ থেকে ১৪০০ বছর আগের এক
মৃত মানুষের, মানে ‘মহাম্মদের
২৩ বছর’ নামে একটা বই
রিলিজ হয় এবং অবধারিত ভাবে তা মোল্লাতন্ত্রের ধর্মানুভূতিতে চোট ফেলে । ফলস্বরূপ
তাঁরা প্রকাশককে হুমকি দেয়, নির্দেশ দেয় বই না-বেচার এবং তাঁদের ভয়ে
প্রকাশক ব্যান বোর্ড ঝুলিয়ে স্টলের গায়ে কালো বোরখা চাপায় ।
বইয়ের মেলায় বই-ই মুখ ঢাকে। আর অশিক্ষিত মোল্লারা জংগিপনা করে ঘুরে বেড়ায় । বাজার চলতি বইয়ের শক্তি যে আল্লার কেতাবের চেয়েও বেশি তা ওরা প্রতিবার নিজেরাই প্রমান করে ।
বইয়ের মেলায় বই-ই মুখ ঢাকে। আর অশিক্ষিত মোল্লারা জংগিপনা করে ঘুরে বেড়ায় । বাজার চলতি বইয়ের শক্তি যে আল্লার কেতাবের চেয়েও বেশি তা ওরা প্রতিবার নিজেরাই প্রমান করে ।
এই ঘটনায় বিনা
কারনে বিশ্বখ্যাত বাঙালি লেখক তসলিমা
নাসরিনের বই লুকিয়ে ফেলার তাগিদ হঠাৎ করে অনুভব করে বাঙলা একাডেমী।
হুমকির ভয়ে তারা সাত তাড়াতাড়ি দোকানের ঝাঁপি নামিয়ে , বই লুকিয়ে
তসলিমাকে আরো একবার 'ব্যান' করে । কি
ব্যাপার ? না, যুদ্ধ এসেছে, মোল্লা চটেছে !
কান্ড বটে !
মোহাম্মদহীন , আল্লাবিহীন বই আজকাল শুধু মোল্লাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয় না । প্রকাশকদেরও নেয় । মরার আগে নাকি ভিতু মরে লাখবার । আর এমন প্রকাশক যারা নাকি বড় গর্বের সাথে বাংলার 'প্রথম সারির প্রকাশক' হিসেবে নিজেদের অভিহিত করে, তারা এমন কাজ করে প্রমান করে আল্লার চেয়েও মোল্লা বড় । ওদের চটানোর জন্য পিঁপড়ে সমান সুযোগও যদি থাকে তাও ছাই দিয়ে চাপা দেবে ।
'তসলিমা' নামটাই যদি বন্ধ করে ব্যবসা ? তাই প্রথম সারির প্রকাশকের শ্রদ্ধাবনত শির সসম্মানে মোল্লা তন্ত্রের চাপাতির আগে ঝুকিয়ে রাখবে , যদি দয়া করে চাপাতির কোপ মিস হয় !
কান্ড বটে !
মোহাম্মদহীন , আল্লাবিহীন বই আজকাল শুধু মোল্লাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয় না । প্রকাশকদেরও নেয় । মরার আগে নাকি ভিতু মরে লাখবার । আর এমন প্রকাশক যারা নাকি বড় গর্বের সাথে বাংলার 'প্রথম সারির প্রকাশক' হিসেবে নিজেদের অভিহিত করে, তারা এমন কাজ করে প্রমান করে আল্লার চেয়েও মোল্লা বড় । ওদের চটানোর জন্য পিঁপড়ে সমান সুযোগও যদি থাকে তাও ছাই দিয়ে চাপা দেবে ।
'তসলিমা' নামটাই যদি বন্ধ করে ব্যবসা ? তাই প্রথম সারির প্রকাশকের শ্রদ্ধাবনত শির সসম্মানে মোল্লা তন্ত্রের চাপাতির আগে ঝুকিয়ে রাখবে , যদি দয়া করে চাপাতির কোপ মিস হয় !
সব অস্ত্রের
চেয়ে বড় নাকি কলম । আর সেই কলমের জোরে টিকে থাকে লেখক । আর সেই লেখক ভাঙ্গিয়ে
মুনাফা কামায় প্রকাশক । আর অশিক্ষিত মৌলবাদী হুমকির কাছে আত্মসমর্পনের জন্য সেই মুনাফাদাতা
লেখককেই নির্বাসনে পাঠায় বাংলা একাডেমী ।
হ্যাঁ, বাঙালির গর্বের একুশে-বইমেলায় ।
বইমেলায় আজ আর বই নয় বিক্রি হয় ভিরুতা, নীচতা, শঠতা ।
মৌলবাদের আজ্ঞাকারী দাস যত বাড়ে, বইমেলায় তত কমে 'বই', জায়গা নেয় ফতোয়াদাতা আর তার পালনকারিরা ।
হ্যাঁ, বাঙালির গর্বের একুশে-বইমেলায় ।
বইমেলায় আজ আর বই নয় বিক্রি হয় ভিরুতা, নীচতা, শঠতা ।
মৌলবাদের আজ্ঞাকারী দাস যত বাড়ে, বইমেলায় তত কমে 'বই', জায়গা নেয় ফতোয়াদাতা আর তার পালনকারিরা ।
এই ফেব্রুয়ারি
বইমেলার জন্মই হয় ২১ শের ভাষাদিবসের স্মরণে। কারন বাংলাদেশে ২১ শে ফেব্রুয়ারি
আমাদের মত শুধুমাত্র ‘মাতৃভাষাদিবস’ নয়, ‘শহিদ দিবস’। ভাষা শহিদ-দের
স্মরণে নানা উৎসব আয়জন হয়। বাংলা ভাষা । দেশের ভাষা । নিজের মায়ের ভাষা ।
মাতৃদুগ্ধের পরেই নাকি যার স্থান বাঁধা । এ ভাষা নাকি প্রতিবাদির রক্তে বয় । এ
ভাষা নাকি চেতনার ভাষা । এ নাকি স্বাধীনতার ভাষা ।
আজ সেই ভাষাকে দেখতে হচ্ছে মোল্লার দাঁতের ফাঁকের ভাষা । মৌলবাদের ভাষা । নির্বাসনের ভাষা । হুমকির ভাষা । নিষীদ্ধ ভাষা । ভীরুতার ভাষা । আত্মসমর্পনের ভাষা। গ্লানীর ভাষা।
আজ সেই ভাষাকে দেখতে হচ্ছে মোল্লার দাঁতের ফাঁকের ভাষা । মৌলবাদের ভাষা । নির্বাসনের ভাষা । হুমকির ভাষা । নিষীদ্ধ ভাষা । ভীরুতার ভাষা । আত্মসমর্পনের ভাষা। গ্লানীর ভাষা।
বড্ড আফশোস,
আমরা এমন এক Islamized ভাষায় কথা বলি , কবিতা লিখি, গান গাই
।
বিগত কয়েক দশক ধরেই এপাড় ওপাড় দুপাড়েই প্রস্তুত হয়েছে
মৌলবাদের ভুমি, যা
দখল করেছে আমাদের এই সাংস্কৃতিক মাতৃভূমিকে । আশেপাশে তাকালেই
চোখে পড়ে ২০১৪ সালের ভারত বা বাংলাদেশকে । মুজাফফরনগর থেকে রামপুরহাটের খরমাডাঙ্গা
। বস্তি জ্বালানো ,
নানা প্রলোভন বা জোর করে ধর্মান্তরকরণ এই সবই ‘স্বচ্ছ ভারতে’র নিদর্শন ! শুধু ভারতেই
নয় সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে ধর্ম-উন্মাদদের আস্ফালন । শরিয়া আইন প্রচলনের পক্ষে ইসলামি দেশগুলো জাতিসঙ্ঘের কাছে দরবার করছে বিশ্বব্যাপী ব্লাসফেমী আইন বলবৎ
করার জন্য । জানি না জাতিসঙ্ঘ কোন ভোট ব্যাঙ্কের ভয়ে গ্রহণ করেছে তাদের আপীল, ভেবে
দেখছে তাদের দাবী ! বড্ড কঠিন সময় চলছে ।
২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল
জাতীয় বিজ্ঞান দিবস । তার ক’দিন আগে বিশ্ব হারালো একজন বিজ্ঞান সাধককে । মুক্তমনা, বিরল প্রতিভা চিরতরে
মুছে গেল মৌলবাদের উদ্ধত চাপাতির আস্ফালনের কাছে। আমরা তবে কাদের জন্য গর্ব করব ? কিভাবে
লাগাব সচেতনতার জয়টীকা আগামীর কপালে ?
মস্তিস্কই যখন শেকল বন্দী, তবে কার কাছে প্রজ্জ্বলিত করব মুক্তচিন্তার প্রদীপ ?
মস্তিস্কই যখন শেকল বন্দী, তবে কার কাছে প্রজ্জ্বলিত করব মুক্তচিন্তার প্রদীপ ?
সেলুকাস ! এ তো ভঙ্গ বঙ্গদেশ । এখানে সত্য বলো না,
ন্যায়বিচার চেওনা । কোপানো হবে ।
তারচে বরং ধর্মের জয়ধ্বনী কর । ফেসবুকে ফারাবীরা ১০০ লাইক দেবে ।
বিচারের বানী এখানে নিভৃতে কাঁদে না , আজকাল ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে দেখে মানুষের রক্তের রং দিন দিন কালচে হচ্ছে কিনা ! আজকাল আর মাথার দাম ঘোষনা নিয়ে মিছিলে মুখ ঢাকে না মৌলবাদের শহর।
টুইটারে, ফেসবুকে কত সহজে কত খোলাখুলি এরা ঘোষনা করে কবে কখন কাকে কিভাবে হত্যা করা হবে। এক সাথে মিলিয়ন মানুষকে বুক ঠুকে জানান দেয় আমরা আছি , থাকব পৃথিবীর শেষ দিন অবধি।
তারচে বরং ধর্মের জয়ধ্বনী কর । ফেসবুকে ফারাবীরা ১০০ লাইক দেবে ।
বিচারের বানী এখানে নিভৃতে কাঁদে না , আজকাল ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে দেখে মানুষের রক্তের রং দিন দিন কালচে হচ্ছে কিনা ! আজকাল আর মাথার দাম ঘোষনা নিয়ে মিছিলে মুখ ঢাকে না মৌলবাদের শহর।
টুইটারে, ফেসবুকে কত সহজে কত খোলাখুলি এরা ঘোষনা করে কবে কখন কাকে কিভাবে হত্যা করা হবে। এক সাথে মিলিয়ন মানুষকে বুক ঠুকে জানান দেয় আমরা আছি , থাকব পৃথিবীর শেষ দিন অবধি।
'আনসার বাংলা ৭' -- এক অখ্যাত
মৌলবাদী গোষ্ঠি আজ 'মুক্তমনা'
হত্যার দায়ে রাতারাতি বিখ্যাত নাকি কুখ্যাত । আর এদিকে আমরা মুখ লুকাচ্ছি লজ্জায় । এইভাবে যদি দেশ হাঁটতে থাকে বছরের পর বছর, তবে কোন এক সুন্দর সকালে
সংবিধানে মুক্তচিন্তার বিরূদ্ধে আইন লাগু হবে । জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে
শরিয়ার মত নৃশংস আইন সবার মাথায় ।
গ্লোবাল ইসলামাইজেশনের জেরে পৃথিবীর অভিধান থেকে মুছে যাবে 'সেকুলার' শব্দটা ।
দেশগুলো সব বোরখার কালো অন্ধকারে ঢেকে রাখতে বাধ্য হবে নিজেদের মানচিত্র ।
মুক্তচিন্তার প্রসারের ভয়ে ভীত ধর্ম ও তার সন্ত্রাসী পেয়াদারা পৃথিবী থেকে কেড়ে নেবে স্কুল -কলেজ-বই-কলম-কম্পিউটার । ব্লাসফেমাস-দের নির্বিচারে কোপানো হবে দিনে দুপুরে ।
একবার কল্পনা কর এমন এক পৃথিবী যেখানে বাড়ির বাচ্চাটি স্কুলে না গিয়ে প্রান রক্ষার তাগিদে হাতে তুলে নিচ্ছে নিজের চেয়েও ভারি AK 56 ! অভিজিত রায়ের পরে , আমার মনে হয়, এমন এক সকাল আসতে খুব দেরি নেই ।
গ্লোবাল ইসলামাইজেশনের জেরে পৃথিবীর অভিধান থেকে মুছে যাবে 'সেকুলার' শব্দটা ।
দেশগুলো সব বোরখার কালো অন্ধকারে ঢেকে রাখতে বাধ্য হবে নিজেদের মানচিত্র ।
মুক্তচিন্তার প্রসারের ভয়ে ভীত ধর্ম ও তার সন্ত্রাসী পেয়াদারা পৃথিবী থেকে কেড়ে নেবে স্কুল -কলেজ-বই-কলম-কম্পিউটার । ব্লাসফেমাস-দের নির্বিচারে কোপানো হবে দিনে দুপুরে ।
একবার কল্পনা কর এমন এক পৃথিবী যেখানে বাড়ির বাচ্চাটি স্কুলে না গিয়ে প্রান রক্ষার তাগিদে হাতে তুলে নিচ্ছে নিজের চেয়েও ভারি AK 56 ! অভিজিত রায়ের পরে , আমার মনে হয়, এমন এক সকাল আসতে খুব দেরি নেই ।
কারন আমাদের এই
পশ্চিমবঙ্গেই আমরা দেখেছি খাগড়াগড় কেমন করে সবার চোখের সামনে হয়ে উঠেছে জঙ্গিদের
নিরাপদ আশ্রয় । মন্ত্রীসান্ত্রীকে সঙ্গ দান করে দিল্লীর মিটিং এ যাচ্ছে দাগী আসামী
এক জামাতি । পোষা হচ্ছে ধর্মীয়
সন্ত্রাসীদের ।কেনা হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র , বোমা, বারুদ ।ভোট ব্যাঙ্কের
লোভে নির্বিচারে চলছে ধম্মব্যবসায়ীদের তোল্লাই দেওয়ার কাজ । রাজ্যের রাজারানী তাঁর
সুস্থচেতনার মাথাকে ঢেকে রাখছেন অন্ধকার হিজাবে । বাধা দেওয়া হচ্ছে
নিরপেক্ষভাবে তদন্তের কাজ । পাছে ইসলামি ভোট কমে, তাই বলা হচ্ছে 'সাজানো ঘটনা' / 'বিছিন্ন ঘটনা' । বিভ্রান্ত করা হচ্ছে
মানুষকে ।
তিস্তার জল বৈঠক অজানা কারনে কোন সমাধান সুত্র বের করছে না । যাতে এদেশের ইসলামি মানুষদের এই বার্তা দেওয়া যায় " দেখ, আমরা ওদেশের 'সেকুলার'; 'শাহবাগী' মুসলিমদের সাথে নেই । তোমাদের সাথে আছি, পাশে আছি ।"
তিস্তার জল বৈঠক অজানা কারনে কোন সমাধান সুত্র বের করছে না । যাতে এদেশের ইসলামি মানুষদের এই বার্তা দেওয়া যায় " দেখ, আমরা ওদেশের 'সেকুলার'; 'শাহবাগী' মুসলিমদের সাথে নেই । তোমাদের সাথে আছি, পাশে আছি ।"
এসবই দেখছি আমরা । আর বড়
ভয়ে ভয়ে বাঁচছি । তবু আমাদের মধ্যে যাদের শিরদাঁড়া বড্ড ঋজু তারা থামাচ্ছে না
মিছিল, মুক্তকন্ঠে ভসে আসছে কলরব, “বানায় কারা নিয়ম কানুন, শানায় কারা আক্রমন / শরীর যদি
ভাঙল তবু সজাগ হয়েই থাকল মন।“
যারা ভাবছেন যে
ব্যতিক্রমী লেখক, শিল্পীদের উপরে এই আঘাত শুধু মাত্র ওদেঁর একান্ত নিজস্ব ঝামেলা,
তারা ডাহা ভুল ভাবছেন । আজ যা ওনাদের হয়েছে,
সাধারন মানুষ শিলাদিত্যের হয়েছে, কাল তা
আমাদেরও হবে । রাস্তার কিছু লোক হয়তো স্রেফ আমাদের চেহারা কালো বলে অ্যাসিড ছুঁড়ে যাবে
মুখে, বা হয়তো পছন্দের গান শুনছি বলে কান কেটে নেবে, অথবা ওদের পছন্দ মত চলতে
পারছি না বলে কুপিয়ে যাবে দিন দুপুরে । আর রাষ্ট্রযন্ত্র তখনও আইনের ফাঁসে অসহায়
গিলোটিন হয়েই থেকে যাবে । একের পর এক আমজনতা নিপীড়িত হবে , মানবাধিকার হারাবে । আর দেশ চেয়ে চেয়ে দেখবে
কতটা কালচে হচ্ছে রক্তের লালীমা ।
হে মোর প্রিয় দেশ, যদি তুমি এখনো মেতে থাকো ১০৮
রকম ধর্মচর্চায়, তবে শেষের সেদিন কিন্তু ভয়ংকর। যেদিন আমরা মুক্তচিন্তার মানুষজন থাকব না সেদিন জবাব দিও নবপ্রজন্মকে । কারন, কোনো রাষ্ট্রআইন
কারুর মস্তিষ্ককে গ্রেফতার করতে পারে না, যদি তা আলোকপ্রাপ্ত হয়, সুস্থচেতনার আধার
হয় । প্রশ্ন আসবেই ধেয়ে। তখন পারবে তো উত্তর দিতে ?
আমরা সেদিন থাকব না ঠিকই,
তবু মনে রেখ, ইতিহাস কিন্তু কাউকে ছেড়ে
কথা কয় না ।