My Attitude!

My Attitude!

Pages

My Blog List

Meet and Recognise-- I, Me and MySelf...!

@@@ ~WELCOME TO MY CYBER WORLD~ @@@











~~~ I am My Own Music, People Want to Get in Touch With Me... Play Your Lyrics By My Rhythm ~~~



Thursday, October 27, 2016

'বাঙালি জাতি' বনাম আমরা - ওরা'

উৎসবের মরশুম । এ সময় বাঙালির উদারতা বা সর্বজনীনতা যার পরনাই বেড়ে যায় । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অমোঘ কণ্ঠস্বরমাখা যে ভোর বাঙালির ঘরে ঘরে নষ্টালজিয়া এনে দেয় , তা কারুর কাছে শারদীয়ার বিনা ঠিকানার চিঠি , আবার কারুর কাছে ভোরের আজানের মত মিস্টি । একটা কথা আজকাল বেশ প্রচলিত “ ধর্ম যার যার , উৎসব সবার।“ এই আপ্তবাক্যই ভারতের বিশেষত বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাবাহক । তবু , মণ্ডপের ভিড়ে কান পাতলে আজও শনা যায় , “ এই দ্যাখ তোদের দূর্গাকে জুম করে ক্যাপচার করলাম । তোরা কি আমাদের আল্লাকে ধরতে পারবি !” অথবা
“ এটা তো তোদেরই রেওয়াজ রে , তুই জানিস না ! আমাদের মধ্যে তো এ খাবারের চল নেই ।“
অর্থাৎ সবেতেই প্রচ্ছন্ন একটা আমরা – ওরার সূক্ষ্ম স্রোত । সাহিত্যিক আব্দুল জব্বার বলেছিলেন “ গোঁড়ারা ধর্মের ঢেঁকি । ... পুরোনো গর্তের ইঁদুর। নতুনকে নিতে পারে না । “
কথাটা শুধু যে ছাপ মারা  ‘গোঁড়া’দের সঙ্গেই বসে , তা না । আমাদের সঙ্গেও একশ ভাগ যায় । সামাজিকতা বজায় রাখতে সুগার কোটেড স্পিচ যতই দিক , নিজের ‘আসল’টা কিন্তু কেউ ছাড়ে না । ‘আসল’ মানে ‘Identity ‘ – নিজের জন্ম- পারিবারিক জাত-ধর্ম-স্বজাতের শিক্ষা ।
আর এই যার যার / তার তার আইডেন্টিটিই বাঙালির বাঙালিয়ানার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা । যা কখনোই আমাদের হিন্দু-মুসলিম আইডেন্টিটির বাইরে স্রেফ ‘বাঙালি’ পরিচয়ের একমাত্র সুতোয় বাঁধতে দেয় না ।
আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু অভিজ্ঞতা নিশ্চয় হয়েছে , কিন্তু স্ব-স্ব সংস্কার বশত এগুলোকে আমরা ‘স্বাভাবিক’ বলেই মেনে নিয়েছি ।

'দিন আগের কথা ।পাড়ার এক ব্যক্তির সাথে প্রায়ই দেখা হয়, কথা হয় টুকটাক । কিন্তু কখনও দেখি সে বাংলায় কথা বলছে, কখনও দেখি হিন্দিতে । আমার সাথে পরিষ্কার বাংলায় কথা বলে , তো সেদিন বইয়ের দোকানে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, “আপনি বাঙালি তো ?”
জবাব পেলাম, " না, আমি মুসলিম ।"
একইসাথে আমি অবাক ও চিন্তিত । চিন্তিত এইজন্য যে, উনি কি আমার প্রশ্ন বুঝতে পারেন নি, নাকি জানেন না । অবাক এইজন্য যে, আমি তো ধর্ম পরিচয় জানতে চাই নি, তাহলে অযাচিত উত্তর দেন কেন !

----"না, আমি জানতে চাইছি আপনি মুসলিম হলেও বাঙালি তো!"
---" আরে, না না । বাঙালি হব কেন? আমি তো মুসলিম ।"
---"তাহলে আপনার মাতৃভাষা কি ?"
---- "বাংলা ।"
এবার আমি বুঝলাম । এরম ঘটনা এই প্রথম নয় । আগেও অনেকবার এমন হয়েছে। রাস্তাঘাটে অচেনাদের বাদই রাখলাম, চেনা পরিচিতদের থেকেও এমন ঝটকা খেয়েছি আগে

মনে পড়ে, গত বছর একটি ছেলে, আমাদের গ্রুপের কমন বন্ধু হিসাবে প্রায় একমাস ধরে ফোন, SMS ইত্যাদিতে বেশ সাবলীল ভাবে কথাবার্তার পরে জানতে চেয়েছিল ,আমি ‘বাঙালি’ কিনা ! তো আমি 'হ্যাঁ' বলেছিলাম ।পরে আমার পুরো নাম শুনে বলেছিল,
---- "ও! তাহলে তো তুমি মুসলিম ? বাঙালি বললে কেন ? "
--- "কারন, ওটাই আমার আসল পরিচয় । পদবীটা তো জন্মসুত্রে পাওয়া আর ধর্মটাও তাই ।"
---"ও , কিন্তু তাহলে বল বাঙালি মুসলিম । বাঙালি নও । বাঙালি মানে তো আমরা, হিন্দুরা ।"

এবার আমি চমকে যাই । প্রচন্ড অপমান ও রাগে বলেছিলাম,
----- " মানেটা কী ? 'জন হিন্দুকে দেখাতে পারবে, যে আমার চেয়ে বেশী বাঙালি ? ধর্ম পরিচয়টাই আসল হল ? "

আসল ব্যাপারটা হল, 'বাঙালি' শব্দটা এরাজ্যের হিন্দুরা বহু ব্যবহারে নিজেদের জাত-ধর্মের সাথে এমন ট্যাগিয়ে নিয়েছে যে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও যে বাঙালি হতে পারে, তা একরকম ভুলেই গেছে বা মানতে চায় না ।

এরপরে ট্রেনেও কথা বার্তায় দেখেছি, আমার পাশে বসা বোরখা পরিহিত মুসলিম মেয়ের সাথে জিন্স টী-শার্টের মুসলিম মেয়ের কথা হচ্ছে হিন্দীতে । দুজনেই বন্ধু বা পরিচিতসম্ভবত ঝাড়খন্ডী নন-বেংলী ।
---- " রোজা কা টাইম আ গায়া । ফির ঈদ হ্যায় । মার্কেটিং হো গ্যায়া ক্যায়া তেরা ?"
----- " হাঁ ইয়ার । অর বোল মাত , সালোয়ার শিলহানে দিয়ে তো শালে নে চুস্ত বানা দিয়া । বোলা কি , আব ইহি ফ্যাশান হ্যায় । ওয় বাংগালী লোগ বোলতে হ্যায় না, চুড়ি-পাজামা !"
---- হাহাহাহা !
----- "সহি হ্যায় ইয়ার । বঙ্গালি মুসালমান লোগ ভি না এইসাহি কাপড়া বানাতে হ্যায় । "
---"আরে ছোড় না , উহ লোক ভি মুসলিম হ্যায় ক্যা !"
--- " সাহি বোলা ইয়ার । বাংগালি লোগ মুসলিম বিরাদারি কা গিনতি মে নেহি আঁতে ।"
---" এক্সাক্টলি ইয়ারবঙ্গালি মুসলিম লোগোকা না জাত হ্যায় না ধরম । ওভি হিন্দু হি হ্যায় ।"

এই দু-চারটে আম বাতচিতেই প্রমানিত 'বাঙালি' শব্দটার কি নির্মমভাবে বলাৎকার হয়েছে ।
না, এর জন্য ওই দেশভাগ, আর শ্রেনী বিভক্ত সমাজের ঐতিহাসিক বহু চটকানোতত্ত্ব বা তার ভুক্তাবশেষকে দায়ী করেই কিন্তু আমরা নিজেদের মানে, তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের স্বশিক্ষা বনাম সুশিক্ষার দায় কোনওভাবেই এড়াতে পারি না ।
অনেক প্রগতিশীল উচ্চশিক্ষিত কর্পোরেট ওয়ার্কার হিন্দু বন্ধুদের দেখেছি, যারা সোশাল মিডিয়ায় নানা কথার ফুলঝুড়ি সাজায়, সমাজের নানা উচ্চ বর্গিয় ব্যক্তিদের সাথে ওঠা-বসা করে, নানা সমাজ সেবা মূলক কাজও করে । কিন্তু যখন বিদেশি বন্ধুদের সাথে আলাপ পরিচয় করে, তখন এইভাবে ভারতীয় কালচারের উদাহরণ দেয়,
---" ইটস দা টাইম অফ দূর্গাপূজা । উই আর নাও প্রিপেয়ারিং ফর আওয়ারকালারফুল ফেস্টভাল অফ ওয়ারশিপিং গডেস দূর্গা । দেন কামস কালী পূজা । ইউসী, বেংলীস আর ভেরি কালারফুল পিপল । উই বেংলীস সেলিব্রেট ভেরিয়াস পূজাস, দোলপূর্নীমা অর হোলি উইথ কালারস ।...ইন আওয়ার কালচার ম্যারেজ ইস আলসো ভেরি কালারফুল । বেংগলী ম্যারেজেস আর ডান উইথ ফ্লাওয়ারস এন্ড সিন্দুর ; দ্যাটস অলসো আ ডাস্টিরেড কালার । বেংগলী উইমেন্স উইয়ার হোয়াইট শাড়ি উইথ রেড বর্ডার ইন মেনিফেস্টিভ্যাল অর সেলিব্রেশনস , লাইক বিজয়া দশমী হুইচ ইস দ্যা এন্ড অফদূর্গা পূজা ......"

কথা চলতেই থাকে ফোনে, চ্যাটে , নেটে, ডেটে, স্কাইপে তে । সেইবিদেশি ব্যক্তিটি কতখানি 'বাঙালি কালচার' বুঝল , কে জানে । কিন্তু কথার আড়ালে থেকে যায় চাপা একটা অজ্ঞতা , অজ্ঞানতা , কুশিক্ষার বীজ ।

'বাঙালি কালচারেঠাঁই পায় দূর্গাপূজা, হোলি, হিন্দু বিবাহ, সিঁদুর ইত্যাদি । বাদ যায় নবান্ন, বইমেলা, নববর্ষ, বসন্ত উৎসব ,একান্ত বাঙালিদের মেতে ওঠার দিন ২১শে ফেব্রুয়ারীর রঙ্গিন উজ্জ্বলতা ।

যে পরিচয়টা ভাষা ভিত্তিক হওয়া উচিৎ, তা আজ একটি নির্দিষ্ট ধর্মের একচেটিয়া প্রপার্টি বলে বদনাম কুড়াচ্ছে । যে পরিচয় ধর্ম-জাত ,শ্রেনী-বর্ণ,নারী-পুরুষ , উচ্চ-নীচ, পূর্ব-পশ্চিম ইত্যাদি মোটা দাগের গন্ডীকে একলহমায় দূর করতে পারে, তা নিজেই আজ একটি ‘বিশেষ জাতি’র পরিচয় বাহক
এটা 'বাঙালি' শব্দের অপমান, বাঙালি সমাজের লজ্জা, গোটা জাতির গ্লানী ।
এই যে বাঙালি কালচারে 'আমরা' / 'ওরা' ভাগ , এটা কিন্তু সমাজের মজ্জাগত  
থেকে তাবৎ প্রগতিশীল , সুশীল , শিক্ষিত সম্প্রদায়ও মুক্ত হতে পারে নি এটা শুধু যে 'সহি মুসলিম' প্রজাতির সাথে 'সনাতন হিন্দু' প্রজাতির দ্বন্দ্ব তা ভাবলে কিন্তু ভুল হবে
এসব কট্টর তকমাধারিদের বাইরেও যে একসমুদ্র সাধারণ মানুষ আছে যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাস করে এমন বিদ্বেষ-ঘৃনা-হিংসাত্মক চিন্তাভাবনা
হ্যাঁ, সবটাই কিন্তু অভিজ্ঞতা লব্ধ নয়, বেশিরভাগই শ্রুতিলব্ধ ' জ্ঞান '
শিক্ষিত প্রজন্ম উদারতা, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি নিয়ে লেকচার দিতে শিখেছে ঠিকই , কিন্তু তা জীবনে বাস্তবায়নের সময় ভুলে যায়, সম্প্রদায়-জাত-ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে মানুষ জন্মায় না একটা নাম একটা পদবী দিয়ে এসব জাতিগত ট্যাগ আমাদের গায়ে জোর করে বসানো হয় তারপর সেই বেমক্কা জন্মে পড়া মানুষ সেই নামের চক্করে, বংশানুক্রমিক পরম্পরার ধারা বজায় রাখতে রাখতে কেমন করে যেন 'হোমো-স্যাপিয়েন্স' নামক আসল প্রজাতিটার স্বীকৃতি অস্বীকার করে  
তখনই গড়ে ওঠে স্ব স্ব সারনেম ধারী 'সারমেয়' গোষ্ঠী এবং সমান তালে চলে ভিন্ন গোষ্ঠীর থেকে নিজেদের জাত অহংকার কতটা বেশি তা তুলে ধরার মরিয়া চেষ্টা ...ভৌ ভৌ ভৈরবে আদপে মানুষের মধ্যে বিভেদটা কিন্তু Preoccupied mind এর ফসল আমরা নিজ নিজ ওরিজিন আঁকড়ে রাখার চক্করে একটা সত্যি কথা ভুলে যাই ,  চেহারায় 'মানুষের' পালিশটা ধরে রাখতে পারলেই একটা জীবন ঠিকই বেঁচে-বর্তে থাকা যায়  
তাকে খামোকা হিঁদু- মুসল্লির ফেসপ্যাক দিয়ে মোড়াটা অর্থহীন
হাজার নয় লাখ নয় ...একটা তো মাত্র জীবন তাই না !

আমার রাজ্যের সকল উদারমনষ্ক ‘বাঙালি’ দের কাছে জানতে চাইছি,  একবারও কি নিজেদের সন্তানদের ২১শে ফেব্রুয়ারীর গল্প শুনিয়েছেন ?
শুনিয়েছেন, যে একটা জাতি শুধুমাত্র তাদের মাতৃভাষা চর্চার অধিকারের জন্য হাসতে হাসতে বারুদের সামনে বুক চিতিয়েছিল ? তারা তখন দেখেনি কোন ধর্মের লোক তার সাথে হাত মিলিয়েছে তারা শুধু হাতগুলোকে আঁকড়ে ধরে মুষ্টিবদ্ধ করতে জেনেছিল । সেই হাতগুলো , প্রানশক্তিগুলোই তাদের কাছেই বড় ছিল, ধর্মপরিচয়গুলো নয় কিন্তু ।

হে বাঙালি , সত্যি যদি সেই গল্প শুনিয়ে থাক তোমাদের আত্মজদের , তবে নিশ্চিত জেন, তারা আর যাই হোক সগর্বে নিজেদের হিন্দু- মুসলিম বলার আগে 'বাঙালি' বলতে শিখবে । বাঙালি কোন ছেলে-মেয়ের সাথে বন্ধুত্বের পরে তাকে জিজ্ঞেস করবে না "তুমি বাঙালি হিন্দু ,নাকি বাঙালি মুসলিম?"

আর যদি না শুনিয়ে থাক নিজেদের জাতির ভাষাগত সংঘর্ষের কথা, তবে নিজেকে গর্বিত 'বাঙালি' বলে পরিচয় দেবার আগে, বিদেশি বন্ধুকে 'বাঙালি কালচার' বোঝানোর আগে এটাই পরিস্কার জেনে রেখ, তোমাদের মানবজন্ম হয়তো হয়ে গেছে, কিন্তু 'বাঙালি'  হওয়া এখনো ঢের বাকি


No comments:

Post a Comment