তখন ২০০৪-২০০৫ সাল ।
উচ্চ মাধ্যমিকে জেলাস্তরে প্রথম দশের মধ্যে স্ট্যান্ড করার পরে মফস্বল জীবনের ইতি , হুস করে চকচকে শহর কলকাতায় পড়তে আসা । অনেক কলেজে অ্যাডমিশন টেস্ট শেষে সরকারি পশ কলেজ - 'মৌলানা আজাদ কলেজ' এ ইংরেজী অনার্স নিয়ে ভর্তি হলাম। কিন্তু থাকার জায়গার বেশ অভাব অনুভূত হল, বিশেষত অচেনা শহরে একা এক মেয়ের জন্য ।
উচ্চ মাধ্যমিকে জেলাস্তরে প্রথম দশের মধ্যে স্ট্যান্ড করার পরে মফস্বল জীবনের ইতি , হুস করে চকচকে শহর কলকাতায় পড়তে আসা । অনেক কলেজে অ্যাডমিশন টেস্ট শেষে সরকারি পশ কলেজ - 'মৌলানা আজাদ কলেজ' এ ইংরেজী অনার্স নিয়ে ভর্তি হলাম। কিন্তু থাকার জায়গার বেশ অভাব অনুভূত হল, বিশেষত অচেনা শহরে একা এক মেয়ের জন্য ।
শেষে, উচ্চ মাধ্যমিকের নাম্বার দেখে মেরিট লিস্ট অনুযায়ী পার্ক সার্কাসে 'মুসলিম গার্লস হোস্টেল' নামে ওয়াকফ বোর্ডের আয়ত্তাধীন শুধুমাত্র মুসলিম মেয়েদের জন্য ২০০ জনের নিরাপদ বাসস্থান একটি হোস্টেলে তিন বছরের জন্য থাকা-খাওয়ার আশ্রয় জুটল । বাবা-মা হাঁপ ছেড়ে বাঁচল । আমিও ।
কলেজ জীবনটা কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরেই আমার কাছে আকর্ষণীয় ছিল বরাবর । কারন ওই কলেজ ছিল বোরখা-ঢাকা , হিন্দীভাষীদের মুক্তাঞ্চল আর নয়তো পশ 'ক্যালকেশিয়ান'দের (মানে যারা 'আমি লোরেটো'র জিনিয়াস / 'আমি এ.জি.চার্চের ব্রাইট ব্রেইন!' এরম কথাবার্তাকেই 'কালচার' ভাবত ) নাক উঁচু আঁতলামি দেখানোর জায়গা ।
আমার মত মফস্বলীয়ানদের সেটা ভালো না লাগার অনেক কারণ ছিল ।
আমার মত মফস্বলীয়ানদের সেটা ভালো না লাগার অনেক কারণ ছিল ।
ভালো লাগার জায়গা ছিল আমার হোস্টেলটা ।
সত্যি, জীবনে যে একবারও হোস্টেলে থাকেনি তার জীবনের ১২ আনাই মাটি ! নিজেকে এক্সপ্লোর করার শ্রেষ্ঠ স্থান হল হোস্টেল জীবন । কত শত সুপ্ত প্রতিভা যে বিকশিত হয় এই জীবনে , তা যে যাপন করেনি এই জীবন, সে জানবেই না সারাজীবনেও ।
সত্যি, জীবনে যে একবারও হোস্টেলে থাকেনি তার জীবনের ১২ আনাই মাটি ! নিজেকে এক্সপ্লোর করার শ্রেষ্ঠ স্থান হল হোস্টেল জীবন । কত শত সুপ্ত প্রতিভা যে বিকশিত হয় এই জীবনে , তা যে যাপন করেনি এই জীবন, সে জানবেই না সারাজীবনেও ।
আমাদের হোস্টেল জীবনের অনেক অ্যাডভেঞ্চার করেছিলাম । সেরমই একটা ঘটনা নিয়ে আজকের লেখা ।
বয়স তখন ১৯-২০ । সাল ২০০৫ । অনার্সের পার্ট ১ পরীক্ষা হয়ে গেছে ।
এই সময় আমাদের হোস্টেলের অ্যানুয়াল ফাংসান হয় প্রতিবছর । সেবারেও এই উদ্দেশ্যে আমরা মোট ২০০ জন ১০০/- টাকা করে চাঁদা দিয়েছিলাম । কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারনে আমাদের হোস্টেল সুপার ঘোষনা দিলেন 'এ বছর আর ফাংসান হবে না ।'
এই সময় আমাদের হোস্টেলের অ্যানুয়াল ফাংসান হয় প্রতিবছর । সেবারেও এই উদ্দেশ্যে আমরা মোট ২০০ জন ১০০/- টাকা করে চাঁদা দিয়েছিলাম । কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারনে আমাদের হোস্টেল সুপার ঘোষনা দিলেন 'এ বছর আর ফাংসান হবে না ।'
কি ব্যাপার ?
-- "কোন কারন,তা ঠিক জানা নেই, ওটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত ।"
[ ওয়াকফ বোর্ড হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার পোষিত একটি ট্রাস্টি বোর্ড , যা এরাজ্যে বেশিরভাগ মুসলিম এস্টেটগুলোর একছত্র মালিক , প্রচুর অনুদান আসে এই বোর্ডে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে গরীব-পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগণের মানোন্নয়নের জন্য , এবং বলাইবাহুল্য সেই টাকা পেটে ঢোকে বোর্ডের মুসলিম মেম্বারদের, মানে টাকার কুমিরদের ।]
-- "কোন কারন,তা ঠিক জানা নেই, ওটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত ।"
[ ওয়াকফ বোর্ড হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার পোষিত একটি ট্রাস্টি বোর্ড , যা এরাজ্যে বেশিরভাগ মুসলিম এস্টেটগুলোর একছত্র মালিক , প্রচুর অনুদান আসে এই বোর্ডে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে গরীব-পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগণের মানোন্নয়নের জন্য , এবং বলাইবাহুল্য সেই টাকা পেটে ঢোকে বোর্ডের মুসলিম মেম্বারদের, মানে টাকার কুমিরদের ।]
তো যাই হোক, আমরা দাবি তুললাম , সেই টাকা তাহলে আমাদের ফেরত দেওয়া হোক , যখন অনুষ্ঠানটাই হবে না ।
সুপার বললেন - 'না । টাকা ফেরত হবে না ।'
আমাদের হোস্টেলের দুজন প্রধান অথারিটি ছিলেন - ১) সুপার , ২) মেট্রন ।
সুপার বললেন - 'না । টাকা ফেরত হবে না ।'
আমাদের হোস্টেলের দুজন প্রধান অথারিটি ছিলেন - ১) সুপার , ২) মেট্রন ।
সুপার হতে গেলে সেই মহিলাকে যেকোনো কলেজের প্রফেসর হতে হত ।
অন্তত পক্ষে ২ বছরের কর্মঅভিজ্ঞতা থাকতে হত ।
যে ঘরে সুপার থাকবেন সেখানে তার মেয়ে ছাড়া অন্যকোনো পুরুষ ফ্যামিলি মেম্বার নিষিদ্ধ ছিল ।
তাঁকে মেস কমিটির অর্থাৎ যারা সারামাস মেস (ছাত্রীদের ঠিকঠাক খাওয়ার দ্বায়িত্বপালন - খরচের হিসেব- মেনু-তদারকি ইত্যাদি) চালাবে তার সুপারভাইজ করতে হত টাকা পয়সা ইত্যাদি টোটাল কালেকশন থেকে দিয়ে ।
আমরা বোর্ডাররা মাসে একটা Amount টাকা গচ্ছিত রাখতাম থাকা-খাওয়া বাবদ । সেই টাকা সুপার বের করে মেস কমিটির হাতে দেবেন ঠিকমত মেস চালাবার জন্য ।
অন্তত পক্ষে ২ বছরের কর্মঅভিজ্ঞতা থাকতে হত ।
যে ঘরে সুপার থাকবেন সেখানে তার মেয়ে ছাড়া অন্যকোনো পুরুষ ফ্যামিলি মেম্বার নিষিদ্ধ ছিল ।
তাঁকে মেস কমিটির অর্থাৎ যারা সারামাস মেস (ছাত্রীদের ঠিকঠাক খাওয়ার দ্বায়িত্বপালন - খরচের হিসেব- মেনু-তদারকি ইত্যাদি) চালাবে তার সুপারভাইজ করতে হত টাকা পয়সা ইত্যাদি টোটাল কালেকশন থেকে দিয়ে ।
আমরা বোর্ডাররা মাসে একটা Amount টাকা গচ্ছিত রাখতাম থাকা-খাওয়া বাবদ । সেই টাকা সুপার বের করে মেস কমিটির হাতে দেবেন ঠিকমত মেস চালাবার জন্য ।
হোস্টেলের খাবার কেমন - তা যারা থেকেছে তারা জানে ।
ডালের পরিমান বাড়ানোর জন্য ভাতের মাড় মেশানো ,
বা, মাছের টুকরো বাড়ানোর জন্য ব্লেড দিয়ে ৪ কেজি মাছের ১৫০ টা পিস বের করা ,
বা, সব্জিতে সবুজ কিছু নেই শুধুই আলু এবং
ভাতে সাদার চেয়ে কালো কাঁকড়ের চেহারা বেশি দেখা যাওয়াই স্বাভাবিক --এই হল হোস্টেলের রোজকার মেনু ।
সাথে ফ্রীতে থাকত, রান্নার চাচীদের গালিগালাজ , ওদের মুখে কিছুই বাঁধত না ।
আমাদেরই টাকায় খেয়ে ফুলে ঢোল চেহারা তাদের । আমাদের তিনজনের খাবার ওরা এক একজন খেত ! এই নিয়ে অভিযোগের শেষ ছিল না ।
ডালের পরিমান বাড়ানোর জন্য ভাতের মাড় মেশানো ,
বা, মাছের টুকরো বাড়ানোর জন্য ব্লেড দিয়ে ৪ কেজি মাছের ১৫০ টা পিস বের করা ,
বা, সব্জিতে সবুজ কিছু নেই শুধুই আলু এবং
ভাতে সাদার চেয়ে কালো কাঁকড়ের চেহারা বেশি দেখা যাওয়াই স্বাভাবিক --এই হল হোস্টেলের রোজকার মেনু ।
সাথে ফ্রীতে থাকত, রান্নার চাচীদের গালিগালাজ , ওদের মুখে কিছুই বাঁধত না ।
আমাদেরই টাকায় খেয়ে ফুলে ঢোল চেহারা তাদের । আমাদের তিনজনের খাবার ওরা এক একজন খেত ! এই নিয়ে অভিযোগের শেষ ছিল না ।
আমরা এই নিয়ে চেঁচাতাম , থালা ছুঁড়ে মারতাম , খিদের চোটে লাইনে দাঁড়িয়ে বাটি বাজাতাম !
মোট কথা, আমরা এসব নিয়েই বেশ খুশিতেই থাকতাম ।
বাধ সাধল সুপারের ওই ঘোষনা ।
মোট কথা, আমরা এসব নিয়েই বেশ খুশিতেই থাকতাম ।
বাধ সাধল সুপারের ওই ঘোষনা ।
অনেক অবেদন নিবেদন করেও যখন কাজ হল না , তখন কয়েকজনের পরামর্শে আমি এক রাতে সুপারের অফিসের মাথায় একটা নোটিস টাঙ্গিয়ে এলাম যাতে লেখা ছিল --
'হোস্টেলের সবার পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে অবিলম্বে আমাদের টাকা ফেরত দিন , নইলে আমরা বোর্ডের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হব ।'
প্রসঙ্গত জানাই , অ্যাপ্লিকেশন লেখা বা যে কোনো ফরম্যাল চিঠি চাপাটি লেখাতে আমার ডাক পড়ত , সেই ছোট থেকেই এক কেস !
'হোস্টেলের সবার পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে অবিলম্বে আমাদের টাকা ফেরত দিন , নইলে আমরা বোর্ডের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হব ।'
প্রসঙ্গত জানাই , অ্যাপ্লিকেশন লেখা বা যে কোনো ফরম্যাল চিঠি চাপাটি লেখাতে আমার ডাক পড়ত , সেই ছোট থেকেই এক কেস !
তো সকালে এই নোটিস পড়ে সুপার খচে বোম !
বেছে বেছে আমাদের ক'জনের লোকাল গার্ডিয়ানদের ফোন করে বললেন, ''আপনার মেয়ের নামে চার্জশীট তৈরী হচ্ছে । ওদের নামে অনেক অভিযোগ । আসুন , কথা বলুন । ওদের শিঘ্রই হোস্টেল থেকে তাড়ানো হবে ।"
খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার বাবা খেপে গেলেন । অন্য অনেকের অভিভাবকরা চিন্তিত হলেন ।
সবাই এক কথা -- "টাকা কি কম পড়েছে ? মাত্র ১০০ টাকার জন্য আন্দোলন ? লিখিতভাবে সুপারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও , উনি ঠিক মেনে নেবেন ।"
বেছে বেছে আমাদের ক'জনের লোকাল গার্ডিয়ানদের ফোন করে বললেন, ''আপনার মেয়ের নামে চার্জশীট তৈরী হচ্ছে । ওদের নামে অনেক অভিযোগ । আসুন , কথা বলুন । ওদের শিঘ্রই হোস্টেল থেকে তাড়ানো হবে ।"
খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার বাবা খেপে গেলেন । অন্য অনেকের অভিভাবকরা চিন্তিত হলেন ।
সবাই এক কথা -- "টাকা কি কম পড়েছে ? মাত্র ১০০ টাকার জন্য আন্দোলন ? লিখিতভাবে সুপারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও , উনি ঠিক মেনে নেবেন ।"
এবারে আমাদের মাথা গরম হল ।
আমরা দলে ছিলাম ৫-৭ জন । যাদের নামে চার্জশীট ইত্যাদি । আমার নাম সবার উপরে ।
আমরা দলে ছিলাম ৫-৭ জন । যাদের নামে চার্জশীট ইত্যাদি । আমার নাম সবার উপরে ।
বাড়িতে জানালাম , "কিছুতেই আমরা সুপারের অন্যায় দাবীর কাছে মাথা নোয়াবো না । তাতে যা হয় হবে । "
--- "তাহলে বাড়ি আসবে না । নিজের ব্যবস্থা নিজেই করবে ।" বাবা বলে দিলেন , ফোন কেটে গেল ।
--- "তাহলে বাড়ি আসবে না । নিজের ব্যবস্থা নিজেই করবে ।" বাবা বলে দিলেন , ফোন কেটে গেল ।
খোঁজ নিতে শুরু করলাম , সুপারের এই ঔদ্ধত্বের জবাব দেব কিভাবে ?
বন্ধুরা খোঁজ নিয়ে জানল , সুপারের ভ্যালিডিটি শেষ হয়েছে একমাস আগেই । এবার নতুন সুপার আসার কথা । কিন্তু তিনি পদ আটকে বসে আছেন , ক্ষমতা ও থাকা-খাওয়ার সুবিধের লোভে , যা নিয়ম বিরুদ্ধ ।
আরো জানা গেল , ওনার সাথে ওনার স্বামীও একই হোস্টেল ঘরে থাকেন , যা নিয়ম বিরুদ্ধ ।
পাশাপাশি আরো খোঁজ পাওয়া গেল উনি কোনো কলেজের প্রফেসরই নন, সামান্য এক প্রাইভেট প্রাইমারি স্কুলের টেম্পোরারি টিচার, যা নিয়ম বিরুদ্ধ !
এই করে করে আমরা গোপনে অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম যা সুপারের বিরুদ্ধে যায় ।
আরো জানা গেল , ওনার সাথে ওনার স্বামীও একই হোস্টেল ঘরে থাকেন , যা নিয়ম বিরুদ্ধ ।
পাশাপাশি আরো খোঁজ পাওয়া গেল উনি কোনো কলেজের প্রফেসরই নন, সামান্য এক প্রাইভেট প্রাইমারি স্কুলের টেম্পোরারি টিচার, যা নিয়ম বিরুদ্ধ !
এই করে করে আমরা গোপনে অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম যা সুপারের বিরুদ্ধে যায় ।
এবার,
আমাদের একমাত্র দাবী হয়ে উঠল -- " টাকা নয় । এই কোরাপ্ট সুপারের অপসারণ চাই । নতুন সুপারের নিয়োগ চাই ।"
আমাদের একমাত্র দাবী হয়ে উঠল -- " টাকা নয় । এই কোরাপ্ট সুপারের অপসারণ চাই । নতুন সুপারের নিয়োগ চাই ।"
মে মাস এসে গেল , চাঁদি ফাটা গরমে এক সোমবার সকালে আমরা ৮ জনের দল গেলাম কলকাতার ওয়াকফ বোর্ডের মেইন অফিসে । সেখানে চেয়ারম্যান দেখা করলেন না । বেয়ারা মারফত জানলাম চার্জশীটের ব্যাপার ওনারা কিছু জানেন না । একরকম কুকুরের খেঁদানোর মত তাড়িয়ে দেওয়া হল আমাদের ।
পরের দিন , আমরা ঠিক করলাম ওয়াকফ বোর্ড না , এবার আমাদের গন্তব্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রীর চেম্বার অর্থাৎ মহাকরণ ( Writers Building ) অভিযান । যেমন কথা তেমন কাজ ।
পরের দিন গেলাম মহাকরণ । লাল বাড়ির গেটের সিকিউরিটিরা একসাথে ১০ জন মেয়ে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলেন ।
তিন চার জন এসে বললেন, 'এভাবে সবাইকে তো ঢুকতে দেওয়া হবে না । পারমিশন নিয়ে আসুন । ৩ জনকে Allow করতে পারি ।'
তিন চার জন এসে বললেন, 'এভাবে সবাইকে তো ঢুকতে দেওয়া হবে না । পারমিশন নিয়ে আসুন । ৩ জনকে Allow করতে পারি ।'
আমাদের এক বন্ধুর মামা রাইটার্সে আমলা ছিলেন । পারমিশন এসে গেল । আমি , একজন উর্দুভাষী দিদি ও আরো একজন বন্ধু মিলে গেলাম মন্ত্রী রাজ্জাক মোল্লার সাথে দেখা করতে, কিন্তু উনি না থাকায় আনিসুর রহমানের চেম্বারে গেলাম। উনার অফিসের এক আমলা পই পই করে বারণ করলেন মিডিয়াকে কিছু জানাবে না কিন্তু !
আমরা অভিযোগ যথাযম্ভব বিস্তারিতভাবে বলে গেলাম ও ওয়াকফ বোর্ডের অন্যায় ব্যবহারও বাদ দিলাম না ।
উনি বললেন - ''ঠিক আছে , দেখছি ।''
বুঝে গেলাম ,এভাবে কাজ হবে না ।
আমরা অভিযোগ যথাযম্ভব বিস্তারিতভাবে বলে গেলাম ও ওয়াকফ বোর্ডের অন্যায় ব্যবহারও বাদ দিলাম না ।
উনি বললেন - ''ঠিক আছে , দেখছি ।''
বুঝে গেলাম ,এভাবে কাজ হবে না ।
এরপর শুরু হল, মিডিয়ার সাথে অ্যাপো !
সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কিছু টিচারের আত্মীয় ছিলেন সাংবাদিক । অনুনয় বিনয় করে তাদের কাছে বার্তা পৌঁছালো আমার কিছু বন্ধু।
এদিকে আমি কলেজের পথে দেখতাম পার্ক স্ট্রীটে 'স্টার আনন্দে'র ট্যাবলো আর ওবি ভ্যান দাঁড়ানো ।
একদিন সটান গিয়ে ওদের চ্যানেলে সব জানালাম ।
এই করে 'আজকাল' ,'সংবাদ প্রতিদিন', 'বর্তমান', 'টেলিগ্রাফ' , 'টাইমস' ও সব শেষে 'আনন্দবাজার' জানল । মিডিয়া লুফে নিল পুরো ব্যাপারটা আর মেয়েদের এই লড়াকু অবস্থানকে পুরো সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়াবার আশ্বাস দিল ।
একদিন সটান গিয়ে ওদের চ্যানেলে সব জানালাম ।
এই করে 'আজকাল' ,'সংবাদ প্রতিদিন', 'বর্তমান', 'টেলিগ্রাফ' , 'টাইমস' ও সব শেষে 'আনন্দবাজার' জানল । মিডিয়া লুফে নিল পুরো ব্যাপারটা আর মেয়েদের এই লড়াকু অবস্থানকে পুরো সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়াবার আশ্বাস দিল ।
আমরা নেক্সট অ্যাজেন্ডা স্থির করতে শুরু করলাম । না, কোনো অভিজ্ঞতা , অভিজ্ঞ মাথা আমাদের ছিল না । বিনা গাইডলাইনেই চলছিলাম আমরা । উদ্দেশ্য পরিস্কার ছিল , আর ছিল বুক ভরা সাহস।
যদি হোস্টেল থেকে তাড়িয়ে দেয় ,বাবাও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়, কোথায় যাব ?কিভাবে পড়ব ? আর কেনই বা ছাড়ব মেরিট বেসিসে পাওয়া হোস্টেল ? -- এই চিন্তায় সবাই মরছি ।
তখন মন্ত্রী, আমলা, নেতা , মাথা কাউকেই ডরাই না , এমন মনোভাব ।
যদি হোস্টেল থেকে তাড়িয়ে দেয় ,বাবাও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়, কোথায় যাব ?কিভাবে পড়ব ? আর কেনই বা ছাড়ব মেরিট বেসিসে পাওয়া হোস্টেল ? -- এই চিন্তায় সবাই মরছি ।
তখন মন্ত্রী, আমলা, নেতা , মাথা কাউকেই ডরাই না , এমন মনোভাব ।
পরের দিন, এক সিনিয়র বল্লেন, এভাবে হবে না । আমাদের ডেডলাইন দিতে হবে সরকারপক্ষকে । বোর্ডের কাছে লিখিত দেওয়া হোক , এক কপি মহাকরণেও পাঠানো হোক । আমাদের দাবি না মানলে শুরু হবে অবস্থান বিক্ষোভ , তাতেও না হলে অনশন করব ।
যেই কথা সেই কাজ ।
পরের দিন আবার বোর্ড , এবারে লিখিত দাবি । তাই ফেরাতে পারল না ওরা । শুনল এবং চলে যেতে বলল । বেরিয়ে এসেই মহাকরণ । মন্ত্রী তখন দিল্লীতে । সুতরাং আবার অপেক্ষা ও এবার খোদ শিক্ষা মন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ । আমলারা বুঝল ব্যাপার গুরুতর । মুখ্যমন্ত্রীর চেম্বারের যাওয়ার আগেই অন্যরা থামিয়ে দিয়ে সব লিখিত আবেদন জমা নিলেন ও আমরা বেরোবার আগে বলে গেলাম ---
"৭ দিন সময় । এর মধ্যে যদি কাজ না হয় , অনশনে বসব ।"
পরের দিন আবার বোর্ড , এবারে লিখিত দাবি । তাই ফেরাতে পারল না ওরা । শুনল এবং চলে যেতে বলল । বেরিয়ে এসেই মহাকরণ । মন্ত্রী তখন দিল্লীতে । সুতরাং আবার অপেক্ষা ও এবার খোদ শিক্ষা মন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ । আমলারা বুঝল ব্যাপার গুরুতর । মুখ্যমন্ত্রীর চেম্বারের যাওয়ার আগেই অন্যরা থামিয়ে দিয়ে সব লিখিত আবেদন জমা নিলেন ও আমরা বেরোবার আগে বলে গেলাম ---
"৭ দিন সময় । এর মধ্যে যদি কাজ না হয় , অনশনে বসব ।"
একই মেসেজ ওয়াকফের কাছেও গেল । ওদের সামনে বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ এল । বুঝল, মহাকরণ অবধি যখন এই কাণ্ড গেছে , তখন মিডিয়া নিশ্চয় জেনে গেছে এবং তাদের সাপোর্টও নিশ্চয় আমাদের আছে। ফলত ১০০ টাকার সামান্য সমস্যা, যেটা দিয়ে শুরু হল কাণ্ড , সেটা থেকে এবারে ওয়াকফের কোটি টাকার ঘাপলা ধরা পড়ে যাবে ।
এ যেন কেঁচো খুড়তে কেউটে !
ওয়াকফ বোর্ড প্রমাদ গুনল । বলল-- " না, তোমাদের কারুর নামে কোনো অভিযোগ আমাদের নেই । কোনো চার্জশীট তৈরী হচ্ছে না , হবেও না । তোমরা এইসব না করে মন দিয়ে পড়াশুনা কর।"
অনেক বুঝিয়েও যখন আমাদের একগুঁয়ে মনোভাব থেকে নড়াতে পারল না, তখন হাল ছেড়ে দিল ।
ওয়াকফ বোর্ড প্রমাদ গুনল । বলল-- " না, তোমাদের কারুর নামে কোনো অভিযোগ আমাদের নেই । কোনো চার্জশীট তৈরী হচ্ছে না , হবেও না । তোমরা এইসব না করে মন দিয়ে পড়াশুনা কর।"
অনেক বুঝিয়েও যখন আমাদের একগুঁয়ে মনোভাব থেকে নড়াতে পারল না, তখন হাল ছেড়ে দিল ।
আমরা সোম থেকে শনিবার অবধি টাইম বেঁধে দিলাম । যা মিটিং করার করুন । সুপারের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে । ওকে না সরালে হোস্টেল অচল থাকবে অনির্দিষ্ট কাল।
আমাদের সহপাঠিরা , হোস্টেলমেটরা অনেকেই ভয় পেয়ে , আমাদের গালি দিয়ে হোস্টেল থেকে কিছুদিনের লীভ নিয়ে বাড়ি চলে গেল । ঝামেলা মিটলে ফিরবে এই বাসনায় ।
আমরা থোড়াই কেয়ার করি !
আমাদের সহপাঠিরা , হোস্টেলমেটরা অনেকেই ভয় পেয়ে , আমাদের গালি দিয়ে হোস্টেল থেকে কিছুদিনের লীভ নিয়ে বাড়ি চলে গেল । ঝামেলা মিটলে ফিরবে এই বাসনায় ।
আমরা থোড়াই কেয়ার করি !
এই একসপ্তাহে আমরা আঁকতে শুরু করলাম নানান কার্টুন , প্ল্যাকার্ড , স্লোগান , পোস্টার এবং আরো নানা কিছু ... হ্যাঁ আঁকার দ্বায়িত্বে আমিই ছিলাম , স্লোগান বাঁধতেও সেই আমি ও আমার রুমমেট !
না, কোনো কাজ হল না । বোর্ড থেকে লোক এসে চলে গেল কিন্তু সুরাহা হল না । সুপার আসা-যাওয়া করতেই থাকলেন, সাথে চলল হুমকি । রাস্তায় ছেলে ফিট করার কথাও শুনতে পেলাম । ভয় যে পাইনি , এমন নয় । কিন্তু এতোটা এগিয়ে কিছুতেই পিছু হঠা যায় না ।
শনিবার রাতে হোস্টেলে মিটিং হল । যারা থাকতে চায় না আন্দোলনে তাদের চলে যেতে বলা হল , এবং সকালে প্রতি রুমে তালা মারার ব্যবস্থা হল ।
এসে গেল রবিবার । আমাদের ডেড-এন্ড ।
সকাল ৬ টায় পোস্টার - প্ল্যাকার্ড - কার্টুন ইত্যাদি হোস্টেল গেটের বাইরের দেওয়ালে আটকে শুরু হল ৩৫ জনের অবস্থান ।
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হল দীলখুশা স্ট্রিটের চৌরাস্তা , গলি ।
সকাল ৬ টায় পোস্টার - প্ল্যাকার্ড - কার্টুন ইত্যাদি হোস্টেল গেটের বাইরের দেওয়ালে আটকে শুরু হল ৩৫ জনের অবস্থান ।
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হল দীলখুশা স্ট্রিটের চৌরাস্তা , গলি ।
মিডিয়া আসতে শুরু করল বেলা গড়াতেই । সুপার ভয়ে পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে গেল । খবর গেল বোর্ডে , রাইটার্সেও ।
অবস্থান তখন অনশনের পথে ।
বেলা গড়াতেই আমাদের বন্ধুরা একে একে অসুস্থ হতে লাগল । ওদের নিয়ে যাওয়া হল নিকটবর্তী 'ইসলামিয়া হসপিটালে' ।
অবস্থান তখন অনশনের পথে ।
বেলা গড়াতেই আমাদের বন্ধুরা একে একে অসুস্থ হতে লাগল । ওদের নিয়ে যাওয়া হল নিকটবর্তী 'ইসলামিয়া হসপিটালে' ।
ভালো ছিলাম না আমরা কেউই ।
এরমধ্যে দুজন মিলে লিফলেট জেরক্স করে হ্যান্ডবিল আকারে রাস্তায় বিলোতে শুরু করেছি ।
ভীড় বাড়ছিল । একগাড়ি পুলিশ না জানি কি করে বা কেন এসে উপস্থিত ! না, টিয়ার গ্যাসের দরকার পড়ে নি ।
এরমধ্যে দুজন মিলে লিফলেট জেরক্স করে হ্যান্ডবিল আকারে রাস্তায় বিলোতে শুরু করেছি ।
ভীড় বাড়ছিল । একগাড়ি পুলিশ না জানি কি করে বা কেন এসে উপস্থিত ! না, টিয়ার গ্যাসের দরকার পড়ে নি ।
দুপুর গড়াতেই একে একে চার গাড়ি আমলা , মন্ত্রী এবং বোর্ড মেম্বাররা এসে উপস্থিত হল ।
সব শুনলেন আবার । 'অন-স্পট অ্যাকশনের' দাবীতে আবারো মুখরিত হল হোস্টেল চত্ত্বর ।
সব শুনলেন আবার । 'অন-স্পট অ্যাকশনের' দাবীতে আবারো মুখরিত হল হোস্টেল চত্ত্বর ।
ডিজিটাল মিডীয়া ততক্ষনে আমাদের আঁকা কার্টুন আর পোস্টার সব টিভীতে দেখাচ্ছে 'লাইভ ' !
এ
দিকে আমাদের শরীর সত্যি আর দিচ্ছিলো না ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামতেই সুপার যেই ফিরলেন, তক্ষুনী তার ঘর সীল করে নোটিশ ধরিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হল । তার সাথে আমাদের দাবী মত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও শুরু হচ্ছে বলে জানিয়ে দেওয়া হল । অফিসারেরা রাতে গাড়িতে চড়ে বিদায় নিলেন ।
আমরা জল -বিস্কুট খেয়ে পার্টি দিলাম ! ঘুমিয়েই পড়লাম ধরতে গেলে ।
এ
দিকে আমাদের শরীর সত্যি আর দিচ্ছিলো না ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামতেই সুপার যেই ফিরলেন, তক্ষুনী তার ঘর সীল করে নোটিশ ধরিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হল । তার সাথে আমাদের দাবী মত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও শুরু হচ্ছে বলে জানিয়ে দেওয়া হল । অফিসারেরা রাতে গাড়িতে চড়ে বিদায় নিলেন ।
আমরা জল -বিস্কুট খেয়ে পার্টি দিলাম ! ঘুমিয়েই পড়লাম ধরতে গেলে ।
সেদিনের পরেও দীর্ঘদিন মিডিয়ার নানা বন্ধুরা যোগাযোগ রেখেছিলেন আমার সাথে , আমার বন্ধুদের সাথেও ।
এই একটা ঘটনা আমাদের এক লাফে অনেকটা বড় করে দিল । বন্ধুরূপী মানুষের মুখ আর মুখোশের আড়াল থাকল না ।
তবে হ্যাঁ ভালোর মধ্যে, আমাদের মেট্রন ,যিনি ছাত্রী দরদী ছিলেন, তিনি প্রমোশান পেয়ে অস্থায়ী সুপারের চার্জ নিলেন । সাথে আমাদের সমীহও করতে শুরু করলেন ।
রান্নার চাচিদের দৌরাত্ম কিছুটা কমে গেল ।
রান্নার চাচিদের দৌরাত্ম কিছুটা কমে গেল ।
আর আমরা ...হঠাৎ সিনিয়র হয়ে গেলাম অনেকের কাছে !
২০০৬ এ আমাদের শেষদিন অবধি এই এক ঘটনা ওয়াকফ হোস্টেলের ইতিহাসে অলিখিত কিন্তু স্মরনীয় হয়ে থাকল ।
২০০৫ এর আগে এরম কিছু ঘটেনি , এখন ২০১৫ ; এত কাল পরেও কিছুই ঘটল না । তা বলে কি সব ঠিকঠাক চলছে ? নাহ , আসলে সেদিনের প্রতিবাদী মুখগুলো হয়তো পালটে গেছে, এখন নেইও কেউ হ্যাঁ কে 'হ্যাঁ' আর না কে 'না' বলার ।
২০০৫ এর আগে এরম কিছু ঘটেনি , এখন ২০১৫ ; এত কাল পরেও কিছুই ঘটল না । তা বলে কি সব ঠিকঠাক চলছে ? নাহ , আসলে সেদিনের প্রতিবাদী মুখগুলো হয়তো পালটে গেছে, এখন নেইও কেউ হ্যাঁ কে 'হ্যাঁ' আর না কে 'না' বলার ।
মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে আমাদের আনাড়ি আন্দোলনের 'শুরুয়াত' তো হল , তাৎক্ষনিক সুরাহাও হল । কিন্তু মূল ঘাপলার শেষ হল না । ঘাপলার কেচ্ছায় কলঙ্কিত হয়ে থাকল ওয়াকফ বোর্ড ! এই নিয়ে বুদ্ধিজীবিদের বাইট দেখানো হল টিভিতে , অনেক আঁতলামি চলল । ওয়াকফ ট্রাস্ট থাকল ওয়াকফেই।
আমরা পেরিয়ে গেলাম অনেকটা দীর্ঘ পথ । বড় হয়ে গেলাম দ্রুত ।
No comments:
Post a Comment