My Attitude!

My Attitude!

Pages

My Blog List

Meet and Recognise-- I, Me and MySelf...!

@@@ ~WELCOME TO MY CYBER WORLD~ @@@











~~~ I am My Own Music, People Want to Get in Touch With Me... Play Your Lyrics By My Rhythm ~~~



Sunday, June 24, 2018

রাফখাতা ৮


১৯২৭ এবং ১৯৫৯ । দুটো সাল ।
দুটো মাইলফলক আমাদের দেশের, রাজ্যের এবং আমার মত জিয়ার নষ্ট ধড়কন শুনে আবোলতাবোল স্মৃতিচারণ করা লোকেদের ।
আকাশবানী এবং দুরদর্শন । কলকাতা ক/খ এবং ডিডি ১/ বাংলা ।
যেক'টা হাতে গোনা জিনিসের জন্য মন খারাপ লাগে মাঝেমাঝে, ছাই চাপা গুপ্তধনের অনুসন্ধানের মত করে ফেলে আসা জীবনকে হাতড়ে বেড়াই , তার মধ্যে এই দুটো জিনিস অন্যতম ।
মোবাইল, কম্পিউটার, এফ এম- এর মত শব্দেরা যখন জন্মায় নি, সেইসময় আমাদের সাদাকালো জীবনটায় যে দুটো সাদাকালো জিনিস রামধনুর রং ঢেলে সাজিয়েছিল তারা হল এই মানিকজোড়।
১৯২৭ সালের ২৬ শে অগাস্ট ১নাম্বার গারস্টিন প্লেসের একটা ভূতুড়ে বাড়িতে যখন 'কলকাতা রেডিও'-র অফিস বসল , তখন বাঙালি একচালা ছাদের উপর খালি কাপড় শুকানো আর আচার রোদে দেওয়ার বাইরেও একটা 'কাজ' পেল । বাঁশ বেঁধে অ্যান্টেনা টাঙানোর ।
ছেলেপুলের দল এর-তার বাড়ি ঢিল মেরে উপদ্রব করার বাইরেও একটা নেশা পেল - অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে ভূত ধরার নেশা ।
ভূতই তো, আমি তো ছোটবেলায় রেডিওর নানা কণ্ঠের ওঠাপড়া দেখে ভাবতাম হয় ওখানে ভূতেরা কথা বলে, নয়ত মানুষের হাত পা কেটে ছোট সাইজ করে রেডিওর বাক্সে ভরে রাখা হয় ! নইলে দেখা নাই, শোনা নাই, অমন খুপরি থেকে বিচিত্র শব্দের হিংটিংছট ভেসে আসা - এ কোনও লৌকিক কাজকম্ম হতে পারে !
তখন শ্রোতাও যেমন কম ছিল, পয়সাওয়ালা লোকও ছিল হাতে গোনা । যাদের কাছে রেডিও থাকত - তাদের বাড়ি লোকে ঘটা করে দেখতে যেত । এমনই সাদামাটা ছিল সেসব দিন । ১৯৩৩ এর পর বাংলায় নিজস্ব খবর পড়া শুরু হলে পরে একে একে কলকাতা রেডিও অফিসে চাঁদের হাট বসে । কাজী নজরুল ইসলাম , বুলবুল সরকার, বেলা দে, জহর গাঙ্গুলী, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজ কুমার মল্লিক প্রমুখদের জাদুকাঠিতে 'আকাশবানী কলকাতা' মুখরিত হত সারাবেলা ।
তবে আমার ছোটবেলায় রেডিও 'খুলত' সকাল ৬টায় । সিগনেচার টিউন দিয়ে সে যন্ত্র যখন বেজে উঠত তখন বিছানা আটকে পড়ে থাকে ,কোন বাঙালি বাচ্চার সাধ্যি ! ঘুম ভাঙা চোখ জোর করে বন্ধ করেই পাক্কা ৪০ মিনিট বিছানায় বসে থাকা, ৬ঃ৪৫ এর দেশাত্ববোধক তিনটে পর পর গান শুনে দাঁত মাজা শুরু হত আর ৭টার 'প্রাত্যহিকি' শুনে উঁ-উঁ স্বরে নামতা মুখস্থ ! মা ডিউটির জন্য 'রেডি' হতেন প্রাত্যহিকির পরেই ।
৮ঃ৩০টার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুর শুনেই আমার চান করা, রেডি হওয়া এবং ইস্কুলের ভাত খাওয়ার নিয়ম ছিল । আর ছুটির দিনে দুপুর ২টোর খাঁ খাঁ রোদে একপশলা বৃষ্টি হয়ে ঝরত 'গল্প দাদুর আসর', অথবা ১২ঃ৩০টার 'অনুরোধের আসর' । এগুলো ছাড়া ৯০ দশকের জীবন কল্পনাই করা যেত না ।
কলকাতা থেকে অনেক দূরে থাকলেও কলকাতার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল দেব দুলাল বন্দোপাধ্যায়, বরুণ মজুমদার, জগন্নাথ বসু-দের রহস্যময় কণ্ঠস্বরগুলো ।
"আকাশবানী... খবর পড়ছি..." - সাদাকালো বাক্সের ভেতর থেকে অন্তর কাঁপানো এইসব স্বরগুলো শুনেই বাঙালির দিন শুরু হত । ঘড়ি মেলানো থেকে ঘড়ি ধরে প্রাত্যহিক কাজগুলো সারা হত । বাচ্চাদের অন্তরজুড়ে গা ছমছমে গল্পগুলো, যুবাদের বুকে আরতি মুখার্জী, সন্ধ্যা মুখার্জীর সুরেলা গানগুলো তুফান তুলত সেইসব দিনে । আর ছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহালয়ার ভোর । সেই ভোর এখনো আসে, তবে এফ এমের ইয়ার প্লাগে !
আজকের শিশু এন্টেনা উঁচানো কালো বাক্সের গোল নবের কান মুচড়ে শুনতে জানে না " আজকের নাটক ... চন্দ্রগুপ্ত ।"
নাহ, আজকের শুধু শিশু কেন আমাদের কাউকেই আর এসব পুরোনো কিস্যা শুনতে হবে না ।
১৯২৭ থেকে ২০১৭ অবধি নিরবছিন্নভাবে চলা 'আকাশবানী'র এই খবর পড়ার সমাপ্তি ঘটল গত ৮ই জুলাই । সরকারি ভাবে মৃত্যু হল বাঙালির গর্বিত ইতিহাসের এক অনন্য গণমাধ্যমের সংবাদ পাঠের ।
'
খবর পড়ছি...' শোনা যাবে না , শেষ খবর পড়া হয়ে গেছে ।
কারণ এখানকার প্রজন্ম রেডিও শোনে না - অতএব যুগের দাবী শোনো । চারদিকে এত বক্তা, ভয় হয় শ্রোতা নামক ক্যাটেগরিটাই আস্তে আস্তে লুপ্ত না হয়ে যায় , সময়ের দাবী মেনে ।
ঠিক একইভাবে ১৯৫৯ সালে শুরু হওয়া দুরদর্শণের 'চোখ মার্কা' লোগো এবার বদলে যাবে । যে চ্যানেলের জন্য টিভির নামই হয়ে গিয়েছিল 'বোকা বাক্স' -সেই চ্যানেল এবার স্মার্ট হওয়ার খোয়াব দেখছে ।
একটা গোল... তাকে কেন্দ্র করে দুটো অতিকায় 'কমা' পরিক্রমা করছে ... ধীরে ধীরে গোল আর দুই কমা মিলে গিয়ে চোখ হয়ে গেল --- এ দৃশ্য দেখে সেরেল্যাকের বাটি কত বাচ্চার যে খালি হয়ে যেত , কত কিশোরের হোম টাস্ক শেষ হত দ্রুত - তা ৯০ দশকের তরুণ তুর্কীমাত্রেই জানে । সেই ঐতিহাসিক 'নেত্র' যা দূরের জিনিসকে কাছের করে দেখাত - এবার পালটে যাবে । একজন বাঙালি ডিজাইনার দেবাশীষ ভট্টাচার্য্যর হাতে সৃষ্ট এই লোগো এবার বদলে যাচ্ছে । এখনকার 'দুরদর্শন'বিহীন প্রজন্মের জন্য ভাবা হচ্ছে ট্রেন্ডি লোগোর কথা ।
আমাদের কানে যা অমৃত সমান ছিল- 'মিলে সুর মেরা তুমহারা' ... 'ওয়াশিং পাউডার নিরমা'... 'হামারা কাল, হামারা আজ, বুলন্দ ভারত কি বুলন্দ তকদির,হামারা বাজাজ' ... 'ক্যায়া সোয়াদ হ্যায় জিন্দেগী মে ...ক্যাডবেরি '...হামকো পতা হ্যায় জি, সোয়াদ ভরে শক্তি ভরে পার্লে জি'...'মেলোডি খাও খুদ জান যাও'...'বুস্ট ইস দ্যা সিক্রেট অফ মাই এনার্জি' -- সেসব খলবলে বিজ্ঞাপণ গুলো আজকের দিনে অচল । দুরদর্শনের সিগেচার টিউন এখন ইউটিউব মিউজিয়ামে বন্দী !
কারণ সেট টপ বক্সের ১১৮ টা চ্যানেলের দুনিয়ায় এসব রামধনু অতীত বড্ড ফ্যাকাশে লাগে ।
ইঁদুর দৌড়ে নষ্টালজিয়ার কোনও স্থান নেই।
সেই দাবী মেনেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পালটে যাচ্ছে দেশ, কাল, মানুষ ,ফ্যাশান এবং মানসিকতা ।
রবি ঠাকুরের রচনা রাজনৈতিক সমীকরণে ছাঁটাই হচ্ছে , স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যুগের দাবীতে 'টেররিস্ট' / 'এক্সট্রিমিস্ট' হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছেন , সমাজ সংস্কার আন্দোলনের রূপকারদের নামের দখল নিচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের কাট আউট ।
দেশ পাল্টাচ্ছে ।
দেশ আধুনিক হচ্ছে ।
সরকার বদলানোর সাথে সাথে আমাদের ইতিহাসের সোনালী দিনগুলো পালটে যাবে এক এক করে ।
গর্বের ঐতিহাসিক মুকুট খুলে হাল ফ্যাশানের প্যাশনেট ফাঁসে নবীন প্রজন্ম আহ্লাদিত হবে । আমাদের কথা বলার স্টাইল, হাঁটাচলার স্টাইল, পোষাকের স্টাইল, কান্না হাসির স্টাইল - সব এক এক করে ফ্যাশানেব্যল হবে , পালটে যাবে সবকিছু।
শুধু পাল্টাবে না -- সমাজের জগদ্দল নিয়মগুলো,
নারী-শিশু রক্ষার জন্য 'অধিকার চাই' এর দাবীগুলো ,
ধর্ষণের জন্য কার্য কারণ গুলো,
আমাদের দিদিমাদের বলা 'করতে হয় আর করতে নেই' এর শেকলগুলো,
ধর্ম নিয়ে খাওয়াখাওয়ি গুলো,
উচ্চবিত্ত থেকে অন্ত্যজ শ্রেনী অবধি প্রতিটা লোমকূপে আটকে থাকা প্রচলিত সংস্কার এবং কুসংস্কারগুলো ।
তারা পরম্পরার নামে 'আধুনিক' সমাজের বুকে টিকে থাকবে ,
অনুশাসনের নামে 'আধুনিক' চিন্তাদের চোখ রাঙাবে , প্রতিষ্ঠার নামে শাসনে আর শোষনে জর্জরিত করবে স্বাধীনচেতা মস্তিষ্ককে ।
আমার রাফখাতা 'পাল্টে যাওয়া', 'পাল্টি খাওয়া' আর 'পরিবর্তন হওয়া' শব্দেগুলোর তফাৎ খুঁজে হিজিবিজি কাটে দিবারাত্র । চোখের সামনে একের পর এক নষ্টালজিয়ার খণ্ডচিত্র ফুটে উঠে আমায় আন্দোলিত করে তুমুল । বড্ড চিৎকার করতে ইচ্ছে হয় 'আধুনিকতার খোলস তো পালটে ফেলা গেল, মাথার কোষগুলো পাল্টাবে কবে ?'
অস্থির অন্ধকারে কেউ যেন টুটি টিপে ধরে, বোবায় ধরা আমায় নিয়ে আমি এক অসম ছায়াযুদ্ধে হাঁপিয়ে উঠি একসময় । আর চেয়ে চেয়ে দেখি নিস্ফল আক্রোশে আমার রাফখাতার পাতারা উড়ে যাচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে ঘরময় ।

No comments:

Post a Comment