প্রায়
দু'বছর পরে আজ নিজের
জন্মস্থানে গেলাম , মা-কে নিয়ে । সাথে
পক্ষীরাজ । কাল্লা হাসপাতাল, মানে যেখানে আমার জন্ম হয়েছিল , আজও সেখানকার রাস্তা এবড়োখেবড়ো । আজও সেখানে যেতে গেলে
চড়াই উৎরাই আর কাদা জলের খানা খন্দর পার হতে হয়, গত কুড়ি বছর ধরে জায়গাটা একরকম । নজরুলের নামে
বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, তবু রাস্তার ভোল বদল হয়
নি ।
তবু ওই কিছু কিছু ব্যাপার ঘটে না, যেগুলোর কোনো মাথামুণ্ডু নেই, যুক্তিবোধ নেই, কার্যকারণ নেই; অনেকটা সেই নিয়মেই আজও সেখানকার বাতাসে এক অদ্ভুত নেশা নেশা গন্ধ ভাসে , রাস্তার ঢাল আর স্পীডব্রেকারগুলোয় আজও নাটুকেপণা অনুভূত হয় - ঠিক যেমনটি স্কুল বাসের পেছনের সীটে লাফাতে লাফাতে হল্লা করতে করতে যাওয়ার সময় লাগত আমাদের ।
আশ্চর্যের বিষয় হল , এই গন্ধটা বা এই নাটুকেপণার গোপন অনুভূতিটা কেবল আমিই পাই । বাকিদের ' ধুস ! এই অঞ্চলের আর কিছু হবে না ! বিহারীতে ভর্তি, ওয়াক ওঠা গু-গোবরে ভর্তি পথ ঘাট । থাকা যায় ?' - এই হল মোদ্দা কথা । এইজন্য বোধহয় ফ্যান্টাসিদের নিয়মে পরিণত করা উচিৎ না , মাঝেমাঝে যাও, মাঝেমাঝে আহ্লাদিত হও - খুশি থাক ।
আর এই খুশি জিনিসটা বড্ড আপেক্ষিক ।
এই যেমন নুনিয়া নদীর উপরের রাস্তাটার ,যেখানে ছট পুজোয় প্রচুর ভিড় হয়, লাইট লাগে , সেটার ঢাল দিয়ে যখন পক্ষীরাজকে গড়াতে দিলাম , তখন ওর চাকার শিহরণগুলো আমার সেই প্রথম সাইকেল শেখার দিন গুলোকে মনে করাচ্ছিল । বিচিত্র স্বরে বোঁওওও... করে আওয়াজ তুলে ওখানটায় সাইকেল চালাতাম , প্যাডেল করতে হত না , শুধুই হালকা ব্রেকে আঙুল - ব্যস, মনে হত যেন উড়োজাহাজের জানলা খুলে উড়ছি ! আজও তাই হচ্ছিল , শুধু ব্রেকে আঙুলের বদলে ছিল পায়ের পাতা । মনে মনে বোঁওওও... করতে গিয়ে টের পেলাম ঘনশ্যামের খাটালটা থেকে কয়েক জোড়া চোখ এদিকে তাকাচ্ছে । হোক না আয়তলোচন মোষ শাবক - তবু দর্শক তো ! শব্দটাকে গিলে নিলাম - কিন্তু খুশিটা একই থাকল ।
তবু ওই কিছু কিছু ব্যাপার ঘটে না, যেগুলোর কোনো মাথামুণ্ডু নেই, যুক্তিবোধ নেই, কার্যকারণ নেই; অনেকটা সেই নিয়মেই আজও সেখানকার বাতাসে এক অদ্ভুত নেশা নেশা গন্ধ ভাসে , রাস্তার ঢাল আর স্পীডব্রেকারগুলোয় আজও নাটুকেপণা অনুভূত হয় - ঠিক যেমনটি স্কুল বাসের পেছনের সীটে লাফাতে লাফাতে হল্লা করতে করতে যাওয়ার সময় লাগত আমাদের ।
আশ্চর্যের বিষয় হল , এই গন্ধটা বা এই নাটুকেপণার গোপন অনুভূতিটা কেবল আমিই পাই । বাকিদের ' ধুস ! এই অঞ্চলের আর কিছু হবে না ! বিহারীতে ভর্তি, ওয়াক ওঠা গু-গোবরে ভর্তি পথ ঘাট । থাকা যায় ?' - এই হল মোদ্দা কথা । এইজন্য বোধহয় ফ্যান্টাসিদের নিয়মে পরিণত করা উচিৎ না , মাঝেমাঝে যাও, মাঝেমাঝে আহ্লাদিত হও - খুশি থাক ।
আর এই খুশি জিনিসটা বড্ড আপেক্ষিক ।
এই যেমন নুনিয়া নদীর উপরের রাস্তাটার ,যেখানে ছট পুজোয় প্রচুর ভিড় হয়, লাইট লাগে , সেটার ঢাল দিয়ে যখন পক্ষীরাজকে গড়াতে দিলাম , তখন ওর চাকার শিহরণগুলো আমার সেই প্রথম সাইকেল শেখার দিন গুলোকে মনে করাচ্ছিল । বিচিত্র স্বরে বোঁওওও... করে আওয়াজ তুলে ওখানটায় সাইকেল চালাতাম , প্যাডেল করতে হত না , শুধুই হালকা ব্রেকে আঙুল - ব্যস, মনে হত যেন উড়োজাহাজের জানলা খুলে উড়ছি ! আজও তাই হচ্ছিল , শুধু ব্রেকে আঙুলের বদলে ছিল পায়ের পাতা । মনে মনে বোঁওওও... করতে গিয়ে টের পেলাম ঘনশ্যামের খাটালটা থেকে কয়েক জোড়া চোখ এদিকে তাকাচ্ছে । হোক না আয়তলোচন মোষ শাবক - তবু দর্শক তো ! শব্দটাকে গিলে নিলাম - কিন্তু খুশিটা একই থাকল ।
ফেরার
পথে মা বলল, " শখ মিটল ! কবে থেকে
কাল্লা যাব, কাল্লা যাব ড্রাইভ করে
বলে বায়না করছিলি -মিটল তো !"
মাকে বললাম বটে 'হ্যাঁ' , কিন্তু মনে মনে তো জানি, মেটে নি ।
কি করে মিটবে ?
হাসপাতালে তো যাওয়াই হল না । ওখানকার কেবিন , বেড বা নিদেন পক্ষে মেডিসিন মেডিসিন অর্বাচীন গন্ধটাও নেওয়া হল না ।
রাস্তার পাশে পক্ষীরাজকে পার্ক করতে গিয়েই দেখি আমার সেই হোস্টেলটা তার বৃটিশ আমলে নির্মিত জরাজীর্ণ কাঠামোটা নিয়ে একইভাবে দাঁড়িয়ে । ঢুকতে যাব , ওম্মা দেখি শেকল পরানো রয়েছে তার মেইন গেটে ! নিজের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে যদি দেখ ভোজবাজির মত 'নো-এন্টির সাইনবোর্ড' ঝুলছে তোমার জন্য -কেমন লাগবে ? প্রথম গেট বন্ধ, দ্বিতীয় গেট বন্ধ, তৃতীয় গেটের একেবারে শেষে প্রায় আধ কিমি ঘুরে তবে মিলবে ঢোকার পথ ! যেতে পারলাম না । মায়ের তাড়া ছিল, কাজ শেষ হচ্ছে , ফিরতে হবে ।
পাড়ার আনন্দদা , যার কাছ থেকে প্রথম পাবলিক বুথ কী হয় চিনতে শিখেছিলাম - সে যখন ব্যাঙ্কের সামনের গাছতলায় হঠাৎ 'কেমন আছ ?' বলে উঠল , আমার স্মৃতির পাতায় নাম হাতড়াতে দু সেকেন্ড সময় বেশি লাগলেও খুশির প্যাঁটরা খুলতে সময় লাগে নি । সময় লাগে নি তখনও যখন ভিড়ের মধ্যেও ' ওম্মা !কদ্দিন পরে দেখছি তোদের ! " বলে পিঠ চাপড়ে দিল অনিতা মাসি , স্যরি আমার 'লালী' !
এইসব নষ্ট জিয়াদের ধড়কন যখন চলছিল, তখন দূর থেকে বোধহয় ওরা দেখতে পেয়েছিল আমায় , নইলে চিরদুঃখী তালগাছটা হঠাৎ দুলেই বা উঠবে কেন , আর টিনের ভাঙা ট্রি গার্ডের মধ্যে বেড়ে ওঠা কামিনী গাছগুলোই বা দু'চারটে ফুল গড়িয়ে দেবে কেন ! না না, দু'চারটে নয় - বেশ অনেকটা ফুল একসাথে । টিনের যে ট্রি গার্ডের মরচে পড়া ভাঙা কোণা লেগে আমার বাম উরু ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল কুড়ি বছর আগে , সে গাছ একইরকম আছে , সাথে ওই ভাঙা টিনের কোণটাও । একটু বুড়িয়ে গেছে - এই যা ।
শতাব্দী প্রাচীন আমাদের হোস্টেলের গায়ে দেখলাম নতুন রঙের পোঁচ লেগেছে , কোম্পানির তুঘলকি মর্জি ! তা শরীরে নতুন পোষাক যাই চাপুক, শিরাধমনীর পাকদন্ডীতে ছড়ানো পুরোনো গাছেরা জানে এখানকার হৈ চৈ মাখা যৌবনের কথা । তিনটে শিশুর বড় হওয়ার কথা । তাদের শারদীয়া হাসি -কান্না, সরস্বতীপূজোর অঞ্জলী ভাগ করা, বিসর্জনের ভাংরা নাচ , অংকে লাল কালি পাওয়া ঘোর বর্ষাদিন অথবা আম কুড়ানি বোশেখের কথা ।
কাল্লা ঘুরে এলে মনে হয় ওই দিনগুলোকে ছুঁয়ে এলাম । নাই বা থাকল চকচকে রাস্তা, নাই বা থাকল সাজানো গোছানো দোকানপাট - যে 'জীবন গিয়েছে চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার...' তার স্মৃতিদের কী সাজগোজ মানায় !
মাকে বললাম বটে 'হ্যাঁ' , কিন্তু মনে মনে তো জানি, মেটে নি ।
কি করে মিটবে ?
হাসপাতালে তো যাওয়াই হল না । ওখানকার কেবিন , বেড বা নিদেন পক্ষে মেডিসিন মেডিসিন অর্বাচীন গন্ধটাও নেওয়া হল না ।
রাস্তার পাশে পক্ষীরাজকে পার্ক করতে গিয়েই দেখি আমার সেই হোস্টেলটা তার বৃটিশ আমলে নির্মিত জরাজীর্ণ কাঠামোটা নিয়ে একইভাবে দাঁড়িয়ে । ঢুকতে যাব , ওম্মা দেখি শেকল পরানো রয়েছে তার মেইন গেটে ! নিজের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে যদি দেখ ভোজবাজির মত 'নো-এন্টির সাইনবোর্ড' ঝুলছে তোমার জন্য -কেমন লাগবে ? প্রথম গেট বন্ধ, দ্বিতীয় গেট বন্ধ, তৃতীয় গেটের একেবারে শেষে প্রায় আধ কিমি ঘুরে তবে মিলবে ঢোকার পথ ! যেতে পারলাম না । মায়ের তাড়া ছিল, কাজ শেষ হচ্ছে , ফিরতে হবে ।
পাড়ার আনন্দদা , যার কাছ থেকে প্রথম পাবলিক বুথ কী হয় চিনতে শিখেছিলাম - সে যখন ব্যাঙ্কের সামনের গাছতলায় হঠাৎ 'কেমন আছ ?' বলে উঠল , আমার স্মৃতির পাতায় নাম হাতড়াতে দু সেকেন্ড সময় বেশি লাগলেও খুশির প্যাঁটরা খুলতে সময় লাগে নি । সময় লাগে নি তখনও যখন ভিড়ের মধ্যেও ' ওম্মা !কদ্দিন পরে দেখছি তোদের ! " বলে পিঠ চাপড়ে দিল অনিতা মাসি , স্যরি আমার 'লালী' !
এইসব নষ্ট জিয়াদের ধড়কন যখন চলছিল, তখন দূর থেকে বোধহয় ওরা দেখতে পেয়েছিল আমায় , নইলে চিরদুঃখী তালগাছটা হঠাৎ দুলেই বা উঠবে কেন , আর টিনের ভাঙা ট্রি গার্ডের মধ্যে বেড়ে ওঠা কামিনী গাছগুলোই বা দু'চারটে ফুল গড়িয়ে দেবে কেন ! না না, দু'চারটে নয় - বেশ অনেকটা ফুল একসাথে । টিনের যে ট্রি গার্ডের মরচে পড়া ভাঙা কোণা লেগে আমার বাম উরু ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল কুড়ি বছর আগে , সে গাছ একইরকম আছে , সাথে ওই ভাঙা টিনের কোণটাও । একটু বুড়িয়ে গেছে - এই যা ।
শতাব্দী প্রাচীন আমাদের হোস্টেলের গায়ে দেখলাম নতুন রঙের পোঁচ লেগেছে , কোম্পানির তুঘলকি মর্জি ! তা শরীরে নতুন পোষাক যাই চাপুক, শিরাধমনীর পাকদন্ডীতে ছড়ানো পুরোনো গাছেরা জানে এখানকার হৈ চৈ মাখা যৌবনের কথা । তিনটে শিশুর বড় হওয়ার কথা । তাদের শারদীয়া হাসি -কান্না, সরস্বতীপূজোর অঞ্জলী ভাগ করা, বিসর্জনের ভাংরা নাচ , অংকে লাল কালি পাওয়া ঘোর বর্ষাদিন অথবা আম কুড়ানি বোশেখের কথা ।
কাল্লা ঘুরে এলে মনে হয় ওই দিনগুলোকে ছুঁয়ে এলাম । নাই বা থাকল চকচকে রাস্তা, নাই বা থাকল সাজানো গোছানো দোকানপাট - যে 'জীবন গিয়েছে চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার...' তার স্মৃতিদের কী সাজগোজ মানায় !
বেসমেন্ট পার্কিং লট থেকে বেরোতে গিয়ে দেখি, আমার পক্ষীরাজের
টায়ারের গায়ে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি লেগে আছে । এই আষাঢ়েও কৃষ্ণচূড়া ! ওই যে বললাম না
কিছু কিছু ব্যাপার ঘটে যার কার্যকারণ থাকতে নেই - শুধু ভাল লাগার রেশ থাকাই যার
ভবিতব্য ।
কাল্লার চড়াই উৎরাই রাস্তা হোক, কাদাজলের বন্ধুরতা হোক বা কৃষ্ণচূড়ার আলগা প্রেম - আজকের রাফখাতা আমার অযৌক্তিক খুশিদের স্মৃতিকথায় সিক্ত হয়ে রইল ।
কাল্লার চড়াই উৎরাই রাস্তা হোক, কাদাজলের বন্ধুরতা হোক বা কৃষ্ণচূড়ার আলগা প্রেম - আজকের রাফখাতা আমার অযৌক্তিক খুশিদের স্মৃতিকথায় সিক্ত হয়ে রইল ।
No comments:
Post a Comment