বেলা
১১টার আকাশটা যে এমন ভাবে ডুকরে কেঁদে উঠবে - কেই বা জানত ! সারা রাত বিলাপ , ভোর রাতে প্রলাপ এবং
দিনভর কালি ফেলা চোখে তার গোমড়াথেরিয়াম মুখ দেখেই বুঝেছিলাম ঝেঁপে কান্না আসবে ।
এলোও নিয়ম মত । কিন্তু শহরের ব্যস্ত ট্রাফিকে পেশাদার নাগরিক সমাজকে ত্রস্ত করেই
এলো । ওয়াইপারের স্পীড যখন লো থেকে হাই করে ফেলতে বাধ্য হলাম , তখন 'শাওন গগনে ঘোর ঘন ঘটা'র মূহুর্মূহু তর্জন
গর্জন । এরমধ্যেই হঠাৎ একটা ছবি আমায় টাইম মেশিনে চাপিয়ে এক আলোকবর্ষ পেছনে নিয়ে
গেল ।
লাল
টুকটুক রেনকোটে ঢাকা সাড়ে তিন ফুটের এক সিল্যুয়েট ! পাশে তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে বাবা
। রেনকোটের পেছনের উঁচু পিঠ জানান দিচ্ছে মা সরস্বতীর বরপুত্র না হোক, বিদ্যে বোঝাই ছোটবাবু
তো বটেই !
রেনকোট
... আমার ৪২ টা জলের বোতল আর ২১ টা পেন্সিল বাক্স হারিয়ে যাওয়া প্রাইমারি স্কুল
জীবনের সাক্ষী । উষাগ্রাম গার্লসের সেইসব পাশ-ফেলের দিনে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে যে
জিনিসটা ঠিক সময় মত স্কুল ব্যাগে ঢুকে যেত , তা হল ওই রেনকোট । রুটিন অনুযায়ী বইখাতা নিতে ভুল হলেও ,ওইটা নিতে ভুলতাম না।
একটা ধারণা , যা অঙ্কে ভোঁতা মাথায় ভয় ধরিয়ে দিত তা ছিল ' নিজে ভিজলে ক্ষতি নেই । কিন্তু বইয়ের ব্যাগ ভিজলে মা সরস্বতী পাপ দেবে , এবারের অ্যানুয়ালে ডাহা ফেল !'
একটা ধারণা , যা অঙ্কে ভোঁতা মাথায় ভয় ধরিয়ে দিত তা ছিল ' নিজে ভিজলে ক্ষতি নেই । কিন্তু বইয়ের ব্যাগ ভিজলে মা সরস্বতী পাপ দেবে , এবারের অ্যানুয়ালে ডাহা ফেল !'
ডাক-ব্যাকের
মোটা নেভি ব্লু রেনকোট যা ওই তিন ফুট হাইটের আমার হাঁটুর নিচ অবধি ঝুলত, তাকে ধরে পাকড়ে , টেনে টুনে গোড়ালি অবধি
নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলত ঝমঝমে শ্রাবণের বিকেলগুলোয় । বই ভিজলে পাপ, আর জুতো ভিজলে
সর্দি-জ্বর-মার খাওয়া -- তবে কোনটার ইম্প্যাক্ট যে বেশি সেইটা ভাবতে ভাবতে আর এই
টানাটানির চোটে পিঠের উঁচু মতন বিদ্যে-ঢাকা-অংশটা প্রতিবারই ফেটে যেত । ফলে ভেজা
সরস্বতী নিয়ে পরীক্ষায় পাশ-ফেলের টেনশানটা রয়েই যেত । সেটা আরো বেড়ে যেত মলাট
দেওয়া খাতার মাঝের পাতা ছিঁড়ে নৌকা বানানোর সময় । বিশেষত সেই খাতা যদি ভূগোল
কিম্বা অঙ্কের হয় !
কিন্তু রেনকোট পরে কাগজের নৌকা না বানালে তো ক্লাস ফোরের মানইজ্জত থাকে না , বিশেষত সেগুলো যখন বাস থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে নুনীয়া নদীতে ফেলার প্রতিযোগীতা চলে । সেই প্রতিযোগীতায় হার -জিত নেই, কিন্তু নাম না দিলে প্রস্টিজে গ্যামক্সিন ! হেরো পার্টি ।
পূর্ণিমার বোন কৃষ্ণাকে দেখতাম জুতোজোড়া খুলে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে থাকত স্কুল গেটের ধারে ।
-' কিরে, এভাবে কেন দাঁড়িয়েছিস ? জুতো কই ?' - উত্তরে কান এঁটো করে হেসে সে বলত , 'রেনকোটে ব্যাগেল ভেতল ।'
আমরা কপালে চোখ তুলে যখন বইখাতার সাথে জুতোর সহাবস্থান নিয়ে হাঁ- হাঁ করে হাত পা নেড়ে কিছু বলতে যেতাম , তখন ও বেমালুম বলে ফেলত ' জুতো ভিজলে ইস্কুলে আসব কি কলে ? পলিক্ষা দেব কি কলে ? তাই পেলাস্টিকে ঢুকিয়ে অন্য খোপে ভোলেচি । আমাল ব্যাগে দুটো খোপ , জানো ! ' - আমরা বেকুব বনে ঢোক গিলতাম।
সত্যি তো, এইটা তো মাথায় আসে নি । ছোটরা এভাবেই চমকে দিয়ে সমীহ আদায় করে নিত । ভাগ্যিস রেনকোট ছিল ! বড়দের জলের ছিটে বাঁচানো সন্তর্পণ হাঁটাচলা অথবা ছাতার গাম্ভীর্যকে কাঁচকলা দেখিয়ে দেখিয়ে জল ছপছপ করে দৌড়ে যাওয়া যেত বৃষ্টির পরোয়া না করেই ; ' বৃষ্টি আমায় ধরতে পারে না ' - বলতে বলতে ।
হাই স্কুলের উঁচু ক্লাসে যখন হাইটের সাথে ব্যাগের ওজন বাড়ল, তখন রেনকোট ভরার জায়গাটা হাত বদলে নিয়ে নিল ছাতা । নাহ, ছাতায় মাথা ঢাকা গেল ঠিকই, তবে রেনকোটের বাহারি কুঁজওয়ালা আভিজাত্য রইল না ।
কিন্তু রেনকোট পরে কাগজের নৌকা না বানালে তো ক্লাস ফোরের মানইজ্জত থাকে না , বিশেষত সেগুলো যখন বাস থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে নুনীয়া নদীতে ফেলার প্রতিযোগীতা চলে । সেই প্রতিযোগীতায় হার -জিত নেই, কিন্তু নাম না দিলে প্রস্টিজে গ্যামক্সিন ! হেরো পার্টি ।
পূর্ণিমার বোন কৃষ্ণাকে দেখতাম জুতোজোড়া খুলে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে থাকত স্কুল গেটের ধারে ।
-' কিরে, এভাবে কেন দাঁড়িয়েছিস ? জুতো কই ?' - উত্তরে কান এঁটো করে হেসে সে বলত , 'রেনকোটে ব্যাগেল ভেতল ।'
আমরা কপালে চোখ তুলে যখন বইখাতার সাথে জুতোর সহাবস্থান নিয়ে হাঁ- হাঁ করে হাত পা নেড়ে কিছু বলতে যেতাম , তখন ও বেমালুম বলে ফেলত ' জুতো ভিজলে ইস্কুলে আসব কি কলে ? পলিক্ষা দেব কি কলে ? তাই পেলাস্টিকে ঢুকিয়ে অন্য খোপে ভোলেচি । আমাল ব্যাগে দুটো খোপ , জানো ! ' - আমরা বেকুব বনে ঢোক গিলতাম।
সত্যি তো, এইটা তো মাথায় আসে নি । ছোটরা এভাবেই চমকে দিয়ে সমীহ আদায় করে নিত । ভাগ্যিস রেনকোট ছিল ! বড়দের জলের ছিটে বাঁচানো সন্তর্পণ হাঁটাচলা অথবা ছাতার গাম্ভীর্যকে কাঁচকলা দেখিয়ে দেখিয়ে জল ছপছপ করে দৌড়ে যাওয়া যেত বৃষ্টির পরোয়া না করেই ; ' বৃষ্টি আমায় ধরতে পারে না ' - বলতে বলতে ।
হাই স্কুলের উঁচু ক্লাসে যখন হাইটের সাথে ব্যাগের ওজন বাড়ল, তখন রেনকোট ভরার জায়গাটা হাত বদলে নিয়ে নিল ছাতা । নাহ, ছাতায় মাথা ঢাকা গেল ঠিকই, তবে রেনকোটের বাহারি কুঁজওয়ালা আভিজাত্য রইল না ।
ঠিক
যেমনভাবে জলের গেলাসের (কারু মতে গ্লাস) আভিজাত্য কেড়ে নিল প্লাস্টিকের ব্যস্ত
বোতল । সেই জমিদারও নেই,
সেই
জমিদারিও নেই - বংশের কুলীনতা বলতে ডি এন তে কিস্যু নেই । তবু যখন পঞ্চব্যঞ্জ
বেষ্টিত থালা-বাটির পাশে রাখা লতাপাতার কাজ করা বাহারি জগের ছুঁচালো মুখ থেকে
বর্ণহীন পানীয়টি ধারা বেয়ে নেমে পড়ত গেলাসে - তখন হু-হু তৃষ্ণাটা আচানক বেড়ে যেত ।
হোক না তারা স্টিলের , কাঁসার বিলাসিতা নাই বা
থাকল । তবু জল ,
জগ, গেলাস - সমার্থক ছিল
সেই সময় । রেনকোটের মত গেলাসেরও একটা আলাদা সম্মান ছিল । এখন অতিথিদের জন্য গেলাস
তোলা থাকে কাঁচের কুলুঙ্গিতে - তাকের শোভাবর্ধনই যার প্রাত্যহিক কাজ । তাকের ভেতর
থেকে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে রঙিন প্লাস্টিক বোতলের দিকে ।
বাঙালি পেশাদার হোক না হোক , কিন্তু যেই না যেমনতেমন পেশায় ঢুকল অমনি সে ভয়ানক ব্যস্ততার মুখোশে ঢাকা পড়ল । আর ব্যস্ততার অছিলায় বোতল গেলা শিখল । এখন স্কুলের বাচ্চাদেরও বোতলে মুখ । ঠিক যেমন রেনকোটের জায়গায় তারা ছত্রধর হতে স্বচ্ছন্দ্য । ইঁদুর দৌড়ে তারাও মারাত্মক ব্যস্ত কিনা !
গেলাস আকারের ঢাকনা আঁটা জলের বোতল, যাতে জল ঠাণ্ডা থাকে -সেসব কুলীন পাত্র এখন মিউজিয়ামে অথবা গিফট কর্নারে দ্রষ্টব্য । সবাই এখন বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢকিয়ে 'তেষ্টা' মেটায় । কিন্তু চুমুকের 'তৃষ্ণা' মেটে কি !
বাঙালি পেশাদার হোক না হোক , কিন্তু যেই না যেমনতেমন পেশায় ঢুকল অমনি সে ভয়ানক ব্যস্ততার মুখোশে ঢাকা পড়ল । আর ব্যস্ততার অছিলায় বোতল গেলা শিখল । এখন স্কুলের বাচ্চাদেরও বোতলে মুখ । ঠিক যেমন রেনকোটের জায়গায় তারা ছত্রধর হতে স্বচ্ছন্দ্য । ইঁদুর দৌড়ে তারাও মারাত্মক ব্যস্ত কিনা !
গেলাস আকারের ঢাকনা আঁটা জলের বোতল, যাতে জল ঠাণ্ডা থাকে -সেসব কুলীন পাত্র এখন মিউজিয়ামে অথবা গিফট কর্নারে দ্রষ্টব্য । সবাই এখন বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢকিয়ে 'তেষ্টা' মেটায় । কিন্তু চুমুকের 'তৃষ্ণা' মেটে কি !
এমনিভাবে
হারিয়ে যাওয়া টিনের বাক্স,
হলুদ-
সবুজ ফিতে , ব্যাঙ্গাচি খোঁচানো
বিকেল , রেনিডে-র ইচ্ছেকৃত
ভেজানো স্কুল ড্রেস , ব্যাঙের ছাতার নিচে
একবার অন্তত মাথা গলাবার আপ্রাণ চেষ্টা , ফার্ণ
মস এবং অন্যান্য শ্যাওলাদের নিয়ে জীবনবিজ্ঞান বই মিলিয়ে বিস্তর গবেষণা, ঘাস ফড়িং ও সূঁচ ফড়িঙের
লেজে লেজে সুতো বেঁধে উড়িয়ে দেওয়া অথবা লন্ঠনের তাপে ভেজা বই শুকানোর আষাঢ়ে
দিনগুলো নিয়ে রাফখাতার পাতায় কাটাকুটি খেলতে খেলতে বৃষ্টি দেখি ।
রেনকোট হোক বা জলের গেলাস - যা
কিছুই হারানো অতীত , তাই নিয়েই আমার রাফখাতা
জলকেলি শুরু করে ।
তারই মধ্যে কখনোসখনো যখন এক ভেজা চড়ুই গা ঝাড়া দিয়ে জানলার গ্রিলে ঠেস দেয়,
অথবা পথ ভুলে কোনো এক বেজোড় শালিক ভেন্টিলেটরের অতিথি ফুড়ুৎ এর সাথে ঝগড়া করে , অথবা ব্যালকনির পাতাবাহারের লালচে পাতাগুলো জলের ছিটেতে স্নান সারে ,
তখন বড় গোপনে টের পাই , আমার রিক্ত মনের আনাচ কানাচও আমূল সিক্ত হচ্ছে ।
বাইরের কালো আকাশে তখন 'গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গগনে ' ।
আমি জানলাটা হাট করে খুলে দিই । বৃষ্টি ছুঁই ।
তারই মধ্যে কখনোসখনো যখন এক ভেজা চড়ুই গা ঝাড়া দিয়ে জানলার গ্রিলে ঠেস দেয়,
অথবা পথ ভুলে কোনো এক বেজোড় শালিক ভেন্টিলেটরের অতিথি ফুড়ুৎ এর সাথে ঝগড়া করে , অথবা ব্যালকনির পাতাবাহারের লালচে পাতাগুলো জলের ছিটেতে স্নান সারে ,
তখন বড় গোপনে টের পাই , আমার রিক্ত মনের আনাচ কানাচও আমূল সিক্ত হচ্ছে ।
বাইরের কালো আকাশে তখন 'গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গগনে ' ।
আমি জানলাটা হাট করে খুলে দিই । বৃষ্টি ছুঁই ।
" o my raincoat, you saved me from rain and my bag
ReplyDeleteyou hug me during rain, keep me not to wet,
are you a virtual mother?"