My Attitude!

My Attitude!

Pages

My Blog List

Meet and Recognise-- I, Me and MySelf...!

@@@ ~WELCOME TO MY CYBER WORLD~ @@@











~~~ I am My Own Music, People Want to Get in Touch With Me... Play Your Lyrics By My Rhythm ~~~



Sunday, June 24, 2018

রাফখাতা ৫


তখন ফেসবুক ছিল না , মেসেঞ্জার ছিল না, ফোনও ছিল না, টিভি ... নাহ তাও ছিল না । যোগাযোগের পৃথিবীটা তখন আধুনিক ছিল না মোটেই । সেই সময় লোডশেডিং, লম্ফ জ্বালা, লাটিমের সুতো আর লাল চোখের গুরুজন নিয়েই আমরা আধুনিকতা পালন করতাম। বড্ড যাচ্ছেতাই রকম ছাড়া ছাড়া টাইপ জীবন ছিল আমাদের । মার্কেটে প্রতিযোগিতা এমন গাঁতিয়ে আসে নি , হেড স্যর আর সংস্কৃত স্যারের মারের ভয়ে পড়া তৈরি হত রাত জেগে, পাশাপাশি বাড়ির রোববার বিকেলে উত্তম-সুচিত্রা যেমন থাকতেন তেমনি ভেসে আসত হারমোনিয়াম নিয়ে গানের রেওয়াজের সুর , কিছু বেহেড মাতাল তখনও রাতের মায়াজাল ছিঁড়ে বেমক্কা চেঁচিয়ে উঠত , চুরি চামারিও হত এদিক ওদিক , জাল কারবার বছরে এক আধটা নিশ্চয় শুনতাম ,কিন্তু 'বালছাল', 'চু**' , 'ফা**' বা 'ঘাপলা'-র মত শব্দেরা জন্মায় নি, পাড়ার মাঠে ছেলেদের সাথেই ক্রিকেট খেলা আর পড়ার ফাঁকে গল্পের বইয়ের নিষিদ্ধ হাতছানিতে সায় দেওয়া - এরকম একটা প্রি-মর্ডান বাংলা মিডিয়ামের দিন ছিল ।
তা সেইসব দিনে, ১৯৯৯ -এ ঘরের ভেতর ৪৭ দিন ব্যাপী ময়ালকায়া বন্যাকে পেয়েছিলাম । আমাদের ছাদে আশ্রিত এক দম্পতির যমজ বাচ্চা হল - 'বাদল' আর 'বর্ষা' নামে , সেইসময় প্রসূতির পুষ্টিকর খাদ্য আর বাচ্চাদের জন্য দুধের আকালে বুঝেছিলাম অভাবের কষ্ট কাকে বলে ।
ভাতের ফ্যানার সাথে আটা মিশিয়ে একটা বিশ্রী দূর্গন্ধওয়ালা তরল চোঁ চোঁ করে খেতে দেখেছি বানভাসি বাচ্চাদের । মন্টু নামে যে লোকটা আমাদের বাড়িতে পড়ে থাকত, ফাইফরমাস খেটে দিত , তাকে দেখতাম পেটে ভিজে গামছা বেঁধে ত্রাণের কাজে হাত লাগাতে । 'ভিজে গামছা কষে পেটে বেঁধে রাখলে খিদে পায় না' - জেনেছিলাম ওর কাছেই ।
হেলিকপ্টার থেকে ছুঁড়ে দেওয়া চিড়ে, মুড়ি , গুড়-বাতাসা অথবা ওষুধ নিয়ে যখন কাতারে কাতারে লোকের কাড়াকাড়ি পড়ত , আর আমি সহ দুজন বাচ্চা জলে হামেশাই পিছলে পড়ে যেতাম , হাঁকুপাঁকু করে কাদামাখা জল খানিক ঠেলে, খানিক গিলে যখন সেই লাইনে পৌঁছে দেখতাম সব শেষ হয়ে গেছে - সেইসময়ে বুঝেছিলাম খিদের জ্বালা কী !
তখন একদিন মন্টুকাকার মতই পেটে ভিজে গামছা বেঁধে থাকতে হয়েছিল ।
আমাদের স্কুলে যে অগুনতি মানুষ সেবার আশ্রয় নিয়েছিল তাদের কাছে ফেজ টুপি বা পৈতের কোনও মূল্য ছিল না । গাদাগাদি করে বেঁচে থাকতে থাকতে তাঁদের নাম বিভ্রাট হত হামেশাই । তাদের হাতে হাতে গাঁথা ইঁট-মাটির প্রাচীর, ত্রিপলের অস্থায়ী ছাদ আর বালির বস্তা দিয়ে জল আটকানো বাঁধগুলোই বেঁচে থাকার মন্ত্র শোনাত - নাহ, কোনও ঈশ্বর আল্লাহ সেই মানচিত্রে ছিলই না ।
সেইদিন সবাই দেখেছিল একতা কাকে বলে ।
খাট থেকে নেমে যে সকালটায় জলের মধ্যে পায়ের নিচে বিশাল এক সাপের ছটপটানি টের পেয়েছিলাম সেইদিন বুঝেছিলাম ভয় কাকে বলে ।
নাহ, তবু কেউ কিন্তু সাপ মারার জন্য লাঠি হাতে আসে নি । মানুষ, গরু, সাপ, বাঁদর আর কোনোক্রমে বাঁচানো চালের বস্তাগুলোর এক অদ্ভূত সহাবস্থান ছিল সেইসব দিনে । ভেসে যাওয়া গরু, ছাগল , মাছ অথবা বিষাক্ত প্রানী - কেউই কারুর শত্রু ছিল না । নৌকা করে যখন আমাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার ফরমান এল, তখন একই নৌকায় ওরাও উঠেছিল - পদবী জেনে কাউকে নামানো হয় নি । আমরা সবাই সবাইকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম শুধু । সেদিন গো-মাংসভুক আর নিরামিষাশীদের মধ্যেও যে বৈরিতা থাকতে পারে - ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পারে নি ।
ট্রেনের মধ্যে আলুর বস্তা ভরার মত করে যখন জ্যান্ত মানুষ ভরা হচ্ছিল , সবাই চাইছিল নিরাপদে বাঁচার একটুকরো শুখা জমিন পেতে ।
সেই কালো রাতে গৌড় এক্সপ্রেসের নিঝুম কামরায় এক নেশাতুর লোক যখন বাথরুমের দরজা আটকে আমার দিকে তার নোংরা থাবা বাড়িয়ে ধেয়ে এসেছিল - সেদিন টের পেয়েছিলাম বোবায় ধরা আতঙ্ক কাকে বলে ।
তাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে এক ছুটে যখন বাবা আর সাহাকাকু দুজনকেই জানালাম , আর সাহাকাকুই বাবার আগে দুটো কিল বসালো লোকটাকে - সেদিন বুঝেছিলাম স্নেহ কাকে বলে ।
তবু আমরা পাশাপাশিই ছিলাম। সমস্ত অসুন্দরকে একসাথে সহ্য করে একসাথেই তো বাঁচতাম আমরা ।
তখন, বিফ আর পর্কের শত্রুতা জানা ছিল না - খিদেটা কিন্তু একই ছিল ।
তখন, মন্দির আর মসজিদের ধারে বাতাসা লোভী হাতগুলো জড়ো হত - দেওয়াল ভাঙাভাঙির চিন্তা ছাড়াই ।
তখন, লুঙ্গি, বোরখা, ধুতি বা ঘোমটার আকচাআকচি নিয়ে কারুর মাথাই ঘামত না- পালাপার্বণে বছরে একটা বা দুটো নতুন পোষাক পাওয়ার লোভনীয় চাহিদা থাকত বলে ।
কি জানি, তখন অভাব ছিল বলেই হয়তো স্বভাব নষ্ট হতে পারে নি ।
তাই হয়তো পাকা ছাদের অপেক্ষায় থাকা ভট্টাচায্যি কাকুর ছেলে সেবার নিশ্চিন্তে শুতে পেরেছিল ইঁটভাটার আমিনা বিবির কোলে, ফাহিমের সাথেই ।
আধুনিকতার ছোঁয়াচ মুক্ত ওরা 'কাবার উপরে শিবের ফটো কেমন করে বসতে পারে' - এ নিয়ে ভাবার সময়ই জুটাতে পারে না । কাবার অবস্থান নিয়েই স্বচ্ছ ধারণা নেই তাদের ।
স্বচ্ছ ধারণা কি ওদেরও আছে যারা বোমা বাঁধে, লাঠি-চাপাতি চালায়, ঘর পোড়ায়, মিছিল করে, বিক্ষোভে শিশু এবং নারীদের ঢাল বানায় !
আজকে ২০১৭ -য় আমাদের চেনা পাড়াগুলোয় 'অভাব'-এর বড় অভাব ।
এই স্বচ্ছল আধুনিক সমাজটার একটা মোক্ষম মন্বন্তর কিম্বা ভয়ংকর বন্যা দরকার ।
তখন মানুষ বুঝবে ভালবাসা কী , বেঁধে বেঁধে থাকার বাসনা কেমন দেখতে , প্রিয় পোষ্য জলে ভেসে গেলে কেমন কষ্ট হয় , পাউরুটির ফাংগাস সরিয়ে খাওয়ার পর কতটা তৃপ্ত লাগে খিদে পেটে !
রবি ঠাকুরের গানে , শুকতারা পাতায়, মোগলি আর সিঞ্চ্যানের সরলতায় অথবা পিকলুর প্রথম আঁকা ছবির মধ্যে ঈশ্বর দর্শণের আনন্দ কতটা - সেটা আজকের ঈশ্বরভক্তদের জানা খুব দরকার।
আজ তাই বিষাক্ত বিষন্ন বিকেলে 'এত রক্ত কেন?' -এই টপিক বাদ দিয়ে, বরং আমার রাফখাতার প্রতিটা ছেঁড়া পাতা 'একটি সর্বজনীন অভাব' -এর প্রার্থনায় রচনা লেখে ।
বুকশেল্ফের দাগিয়ে পড়া বইগুলোয়ের ফাঁকে ফাঁকে লুকানো ঈশ্বর তখন মনে মনে আশীর্বাদ করেন - সে আমি নিভৃতে টের পাই ।

1 comment:

  1. Mind blowing explanation, by the writer, must elevates the mind of a reader towards the situation where sorrow, anger, laughter are shared unconditionally.

    ReplyDelete